তৃণমূলে মনোযোগ দিয়েছে দেশের দুই রাজনৈতিক দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:তৃণমূলে মনোযোগ দিয়েছে দেশের দুই রাজনৈতিক দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৮ বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। তারা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি গঠনে সম্মেলনের কাজ শুরু করেছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এসব কমিটি ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে তৃণমূলকে প্রস্তুত করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও। চলমান নানা ইস্যুতে আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা ও ইউনিটে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। চলতি মাসে অন্তত ১৫ সাংগঠনিক জেলায় কাউন্সিলের পরিকল্পনা দলটির
ভোটের আগেই বিতর্কিতদের বাদ দেবে আওয়ামী লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল গোছানোর কাজে জোর দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। করোনা সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমেছেন আট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতারা। সারা দেশে শুরু হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সম্মেলনের কাজ। এসব সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পুরোনোদের ফের দেওয়া হচ্ছে বড় দায়িত্ব। পাশাপাশি বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয় ও গণমুখী তরুণ নেতাদের নিয়ে আসা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ভোটের আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ এবং দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মনোযোগী তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, করোনার কারণে আমরা সম্মেলন করতে না পারলেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এতে জনগণের কাছে আমাদের অবস্থান ভালো হয়েছে। কিন্তু সম্মেলন হতে দেরি হওয়ায় অনেক যোগ্য নেতাও এতদিন জায়গা পাননি। তবে এখন সম্মেলনের কাজে গতি অনেক বেড়েছে। ১০ দিনে অন্তত ২০ জেলা-উপজেলার সম্মেলন হয়েছে। আবার জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি-আগস্টের আগেই অধিকাংশ (প্রায় সব) জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব। এর মধ্য দিয়ে আমরা আগামী জাতীয় সম্মেলন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেব।
একই বিষয়ে দলটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করে আমরা সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা চাই তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে। শুধু নামকাওয়াস্তে সম্মেলন করতে চাই না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রকৃত অর্থেই একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী ও গণমুখী করতে চাই। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল নেতৃত্বে আমরা ত্যাগীদের নিয়ে আসতে চাই। পাশাপাশি দলের জন্য নিবেদিত ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদেরও জায়গা দিতে চাই। আমরা চাই-নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ের নেতৃত্ব আসুক।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮ সাংগঠনিক জেলা এবং সাড়ে ছয়শর মতো উপজেলা কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে এখনো ৪০টির মতো জেলা ও চার শতাধিক উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। গত বছর এ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরে তা থেমে যায়। ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় এই কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনা মেনে করোনা সংক্রমণ কমা ও বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর জোরেশোরে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটির তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, থানা বা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। জেলা-উপজেলায় হচ্ছে প্রতিনিধি সম্মেলনও। বিভাগীয় টিমগুলোও নিয়মিত বৈঠক করছে। সেখানে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে দল গোছানোর পাশাপাশি জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের মধ্যকার বিভেদ কমিয়ে তাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, মে মাসের মধ্যে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের (খুলনা) জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। তিনি জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে ১২টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হবে। এছাড়া ১২ মে মাগুড়া, ১৪ মে মেহেরপুর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা এবং ১৬ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির পুরোনো ও অভিজ্ঞ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। প্রায় সাত বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা শেষে বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিমকেই সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুককে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
সাত বছর পর সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কেএম হোসেন আলী হাসান ও আব্দুস সামাদ তালুকদারকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দলীয় কোন্দলের কারণে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সংসদ-সদস্য হাবিবে মিল্লাতকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে হোসেন ও আবদুস সামাদকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা ভারমুক্ত হন।দীর্ঘ সাত বছর পর নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। নতুন কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সভাপতি নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসকে পুনরায় সভাপতি করা হয়। বিদায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের পরিবর্তে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়মী লীগের সম্মেলনগুলোয়ও। দীর্ঘ ৯ বছর পর পঞ্চগড় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম পুনরায় সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান শেখ মিলন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অন্যান্য উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলোয়ও দেখা গেছে শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, তৃণমূল কর্মীদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে জেলা-উপজেলা কমিটিতে তৃণমূলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদেরই জায়গা দেওয়া হয়েছে। কোনো বিতর্কিত, সুবিধাবাদী বা হাইব্রিড নেতাকে জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাখা হয়নি। দুঃসময়েও যাদের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় বিচ্যুতি ঘটেনি, সেইসব ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে। আমরা চেয়েছি তৃণমূলের এসব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তুলতে। আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সার্বিক দিকনির্দেশনায় এই কাজগুলো আমরা সহজে করতে পেরেছি।
চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই পুনর্গঠন শেষ করবে বিএনপি
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় বিএনপি। এজন্য চলমান নানা ইস্যুতে আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা ও ইউনিটে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। সে অনুযায়ী গত সপ্তাহে বগুড়া জেলার সদর উপজেলা ও পৌর ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসে সিলেট, দিনাজপুর, ঢাকা, গাজীপুর জেলাসহ অন্তত ১৫ সাংগঠনিক জেলা ও ৫০টি ইউনিটে কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। পরে করোনা মহামারি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি র্যাব ও সংস্থটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর দলের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বিএনপি মনে করছে, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার চাপে রয়েছে। এই সুযোগে তারা দল পুনর্গঠনের কাজটি শেষ করতে সক্ষম হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির মোট ৮২ সাংগঠনিক জেলা শাখার মধ্যে ৫৬টিতে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। তিন মাস মেয়াদে এসব আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নির্দেশনা ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার সব ইউনিটে কাউন্সিল করে কমিটি দিতে হবে। পরে একই প্রক্রিয়ায় জেলার নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। শুধু যথাসময়ে নীলফামারী ও মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জেলা কাউন্সিল করে কমিটি করতে পেরেছেন। এছাড়া সব জেলার আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নেতারা ইউনিটগুলোর কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে হাইকমান্ড জেলা নেতাদের ওপর অসন্তুষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টানা ৫ দিন ১০ সাংগঠনিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের পর জুনের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা শাখার সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলাসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সিলেট ও ২৮ মার্চ দিনাজপুর জেলার কাউন্সিল হবে। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন। ২৯ মার্চ গাজীপুর জেলা ও ৩০ মার্চ ঢাকা জেলা সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া শেরপুর, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির কাউন্সিল মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধায়ন করছেন। সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা শাখা এবং থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের কাজ চলছে। আমরা রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। আমরা যদি দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা না করি, তাহলে তো এটা সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। সুতরাং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য তৃণমূল থেকে নিজের দলের গণতান্ত্রিক চর্চার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তা পুরোদমে চলছে।
এদিকে কাউন্সিল করার ক্ষেত্রে কাউন্সিলর (ভোটার) কারা হবেন, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি জেলা শাখায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চারটি জেলা শাখার নেতারাজানান, তাদের জেলার অর্ধেক থানা ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে, বাকি অর্ধেক ইউনিটে ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকতে হবে এবং তারাই কাউন্সিলর হবেন। অথচ উপজেলা ও থানা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সুযোগ না দিয়ে তাড়াহুড়ো করে জেলা কমিটির কাউন্সিল করার জন্য জোর করছেন কয়েকজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা। এটি করা হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যে নির্দেশনা, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের সুন্দর প্রক্রিয়া তাতে ত্রুটি থেকে যাবে, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতারা ভোটদানের সুযোগ পাবেন না। তাই তারা সব ইউনিটের কমিটি দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ করে জেলার কাউন্সিল দিতে চান। এজন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ইউনিয়ন ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি হবে ৫১ সদস্যের; ইউনিয়ন এবং মহানগর/পৌরসভা ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি হবে ৭১ সদস্যের; ইউনিয়ন কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি হবে ৭১ সদস্যের, উপজেলা/থানা কাউন্সিল ও উপজেলা/থানা নির্বাহী কমিটি হবে ১০১ সদস্যের, পৌরসভা কাউন্সিল ও পৌরসভা নির্বাহী কমিটিও ১০১ সদস্যের হবে।এ প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কাউন্সিল হবে, সেখানে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই। সাংগঠনিক জেলার ক্ষেত্রে কাউন্সিলর হবে থানা বা উপজেলার নির্বাহী কমিটি। থানার ক্ষেত্রে হবে ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি।সূত্র জানায়, একই প্রক্রিয়া মেনে ১১ মার্চ বিএনপির বগুড়া সদর উপজেলা ও ১২ মার্চ পৌর ইউনিটে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। এতে অনুসরণ করা হয়েছে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনে সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সাত সাংগঠনিক বিভাগের সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা বগুড়া যান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা যেমন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি, একইভাবে দলেও গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত করতে চাই। সেই চিন্তা থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন। তার চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে বগুড়া সদর উপজেলা ও পৌর ইউনিটে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। একইভাবে সারা দেশে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী দিনে দলের তৃণমূলকে সাজানো হবে।গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বড় পরিসরে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। তখন দলের নেতাদের অধিকাংশ নেতাই তৃণমূলকে ঠেলে সাজানোর পক্ষে মত দেন। তারা বলেন, তৃণমূল শক্তিশালী না হলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে পুনর্গঠনের মাধ্যেমে তৃণমূলকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের কমিটি হচ্ছে, এতে দল অনেক শক্তিশালী হবে। ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঢাকা বিভাগের সব জেলায় কাউন্সিল করতে পারব বলে আশা করছি।