ভর্তি পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রশ্নপত্র চান শিক্ষার্থীরা
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার পাস করেছে মোট ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। পাস করা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হলেও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।তারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার ৩৩ হাজার ৯০১ জন পরীক্ষার্থী বেশি ছিল। গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ে নম্বর ও সময় কমিয়ে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) ও সৃজনশীল (সিকিউ) অংশের পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি ছিল না। এ কারণে আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে প্রশ্নপত্র না করে শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ের ওপর প্রশ্নপত্র করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এইচএসসির ফল ঘোষণার পর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ অনুরোধ জানান।এবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল দুই হাজার ২৩০ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছেন দুই হাজার ২২৮ জন। ফেল করেছে দুইজন, এ দুজন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৮০ জন।
ফলাফল জানতে আসা জিপিএ-৫ পাওয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামরিন শামস জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে ঝুঁকি নিয়েই আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হলেও আমাদের ফল সন্তোষজনক হয়েছে। তবে সবগুলো বিষয়ে পরীক্ষা হলেও জিপিএ-৫ পেতাম। সামনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষায় আমরা চাই যেন তিনটি বিষয়ের ওপর প্রশ্নপত্র করা হয়।এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা তার মা ডা. সায়মা পারভীন বলেন, গত বছর অটোপাস হলেও এবার করোনার কারণে পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলাম। তবুও করোনার মধ্যে তিনটা বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় আমরা খুশি এবং মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। এখন সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত। যদি সবগুলো বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট বেড়ে যাবে।তিনি বলেন, করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার খুলবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি। যদি কোচিং সেন্টার না খোলে সেক্ষেত্রে তিন বিষয়ের ওপরেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করছি।খিলগাঁও থেকে বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে ফলাফল জানতে কলেজে আসেন তাহসিনা রহমান স্পর্শ নামের আরেক শিক্ষার্থী। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, মা-বাবা ও শিক্ষকদের সঠিক গাইডলাইনের জন্য জিপিএ-৫ পেয়েছি। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখন সব চিন্তা ভাবনা। পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় আসবে তা নিয়ে এখনও কোনো ধারণা আমরা পায়নি।
নাজনীন মুন্নী নেহা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হোক। কারণ সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন। একদিকে করোনা অন্যদিকে কোচিং করতে না পারলে সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা আমরা চাই না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, কোভিডের মধ্যেও আমাদের এইচএসসির ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে। কলেজে সরাসরি উপস্থিত নাহলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস হয়েছে এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা দিতে পেরেছে এতেই তারা খুশি। এবার যেহেতু সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে, তাই আশা করছি আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হবে।এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো নির্দেশনা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে। কারণ আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হোক তা আমরা চাই না। সরকারও এটা চায় না।এদিকে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বৈশ্বিক চিন্তা করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নিতে পারে। তাদের ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একই মেধায় দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তো সমস্যা থাকার কথা নয়। শিক্ষার্থীরা যাতে সুযোগ পায় আমরা সে চেষ্টা করবো।এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর সাধারণ ৯টি বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই ৯টি বোর্ডে পাস করেছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।অপরদিকে কারিগরি বোর্ডে পাস করেছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে এক লাখ এক হাজার ৭৬৮ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এ পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। গতবারের চেয়ে এবার ৩৩ হাজার ৯০১ জন পরীক্ষার্থী বেশি ছিল।