প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ।এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে দেশের সরকারি-বেসরকারি,জিও-এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং বর্হিবিশ্বের উন্নয়ন সংস্থাসমূহ এ দেশে এসে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে তা একাবারেই যথেষ্ট নয়।প্রতিদিনই টেলিভিশন, রেডিও,জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা গুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। সব মিলিয়ে কোন ভাবেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমছেই না বরং দিন দিন বেড়েই চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে,পানির প্রতি শিশুদের স্বভাবজাত আকর্ষণ, মায়ের ব্যস্ততা বা অনুপস্থিতি, মায়ের সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব, মায়ের অবর্তমানে অন্যদের তত্ত¡াবধানের অভাব, বাড়ির পাশের পুকুরে বেষ্টনী না-থাকা, শিশুদের বেষ্টনীবিহীন পুকুরের আশপাশে খেলাধুলা করা, সাঁতার না জানা ইত্যাদি কারণে শিশুরা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ভ্রমণের সময় নৌকা ডুবে যাওয়া,প্রাকৃতিক দুর্যোগ,সাইক্লোন, বন্যাসহ খিঁচুনি বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং স্থানীয় হাসপাতাল দূরে থাকার কারণেও পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যু ঘটে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে,পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে ওপরে উঠানোর পর তাকে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাকশেসন) পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। সিপিআর দেয়ার পর রোগী নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কারও খিঁচুনি বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে তাকে কোনো অবস্থাতেই পানিতে নামতে দেয়া যাবে না। এছাড়া ডুবে যাওয়া শিশুকে পানি থেকে উঠানোর পর বিলম্ব না করে সিপিআর প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। সিপিআর দেয়ার পর রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

এ ব্যাপারে ভাসা প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের মধ্য দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে অনেকগুলো বড় নদী মিলিত হয়েছে। যার ফলে দেশের ঝুঁকিপূর্ন ও দূর্যোগ প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে বরিশালের ৬ জেলাই অন্যতম। এ অঞ্চলে পানিতে ডোবার ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে পুকুরে এবং বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে। আর বাকিগুলো ঘটে ডোবা, খাল ,জলাশয় এবং নদীতে। এ ধরণের দূর্ঘটনা পুরো বছর ঘটলেও তবে বেশি ঘটে জুন থেকে অক্টোবর মাসে।কারণ হিসেবে তিনি আরো জানিয়েছেন, বিভাগের গ্রামাঞ্চলে সকাল নয়টা থেকে দুপুর ৩ টার মধ্যে পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে। বাড়ির বয়স্ক সদস্যরা তখন মা গৃহস্থলীর কাজে, বাবা থাকে ক্ষেত-খামারে ব্যস্ত আর মায়ের অবর্তমানে অন্যদের তত্বাধানে অভাব কারণেই এ দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে কমলমতি শিশুরা। পানিতে ডোবার মৃত্যুর কমানোর লক্ষে প্রতিকার ও প্রতিরোধ হিসেবে ভাসা প্রকল্প বরিশালের কলাপাড়া, বেতাগী ও তালতলীর বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছেন।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে (২০১৬)এর একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,বাংলাদেশে বছরে প্রতি লাখে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে ১১ দশমিক ৭ ভাগ জন মানুষ। আর ‌‘সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রির্সাচ,বাংলাদেশ- (সিআইপিআরবি)’র ভাসা প্রকল্পের আওতায় একটি পরিসংখ্যানে (অক্টোবর ২০১৬- ফেব্রুয়ারী ২০১৭ পর্যন্ত) দেখা গেছে,বরিশালের ৬ জেলাজুড়ে পানিতে ডুবে করুণ মৃত্যুর স্বীকার হচ্ছে প্রতি লাখে ৩৭ দমশিক ৯ ভাগ জন মানুষ। এর মধ্যে বরিশালে প্রতি বছরে ৩ হাজার ১৪৪ জন,প্রতি মাসে ২৬২ জন, দিনে ৯ আর প্রতি আড়াই ঘন্টায় ১ জন করে মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুও কোলে ঢলে পড়ছে। যা বাংলাদেশের বাকি বিভাগগুলোর তুলনায় ৩ গুনেরও বেশি।

সুইমসেফের তথ্যমতে, ১-৪ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। শিশুর পাশাপাশি অসংখ বয়স্ক নারী-পুরুষেরও প্রাণহানি ঘটছে। বরিশাল নদী কেন্দ্রীক বিভাগ আর ঝুকিঁপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় পানিতে ডুবে মৃত্যু এখন ‘নীরব মহামারি’ রূপ ধারণ করছে।

দিনের বেলায় কমিউনিটিতে আচঁল নামে শিশু যত্ন কেন্দ্র খুলেছেন। এ কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ঠ কমিউনিটির শিশুদের কে এনে কর্মরত একজন আচঁল মা ও তার সহকারী একজন নারী সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩ টা প্রর্যন্ত মায়ের মত তাঁর আচঁলের নিচে রেখে মায়া-মমতা আর বিভিন্ন খেলাধুলা এবং বিনোদনের মাধ্যমে যত্ন নেন। এছাড়াও সংস্থাটি কমিউনিটিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে পথ নাটিকা,লাইফ র্গাড, পানিতে নিরাপত্তা সর্ম্পকে শিক্ষা,পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা,নৌযানের নিরাপত্তা,পেশাগত নিরাপত্তা এবং নীতিমালা প্রনয়নসহ , শিশুদের সাতাঁর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

Top