সবকিছু যখন স্থবির ছিল তখন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবকিছু যখন স্থবির ছিল তখন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:করোনার সময় দেশের প্রায় সবকিছু যখন স্থবির ছিল তখন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। একই সময়ে কমেছে খুনের ঘটনা। সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তথ্যের সমন্বয়ে তৈরি করা ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের তুলনায় গেল অর্থবছরে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে এক হাজার ৩৮০টি ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে এক হাজার ৯০৭টি। অন্যদিকে খুনের ঘটনা আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে কমেছে ২৭টি। মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠক কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন দেখে মেয়র জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনটি পর্যালোচনা করতে দু-একদিন সময় লাগতে পারে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ধর্ষণ মামলা ছিল পাঁচ হাজার ৮৪২টি, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সেটা বেড়ে হয়েছে সাত হাজার ২২২টি। নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৬৬০টি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭টি। অন্যদিকে করোনা মহামারির মধ্যে দেশে সার্বিকভাবে মামলার সংখ্যা কমেছে। গত অর্থবছরে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৬১ হাজার। চলতি অর্থবছরের শেষে এসে দেখা যায় পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি মামলা হয়েছে। মামলা কমেছে প্রায় ৯১ হাজার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে ৩২১টি। রাহাজানি ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল দুই হাজার ১৬৬টি, এ বছর এক হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ছিল তিন হাজার ৪৮৫টি, এ বছরে তিন হাজার ৪৫৮টি।বার্ষিক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানির পরিমাণ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অর্থ বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ।

মন্ত্রিসভায় দুটি আইনের সংশোধন ওঠে। এর মধ্যে মেয়াদ শেষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের বদলে প্রশাসক বসানোর বিধান রেখে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া জেলা পরিষদ সদস্যদের সংখ্যা উপজেলা প্রতি একজন করার সংশোধনসহ আরও ছয়টি সংশোধনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অন্যদিকে সনদ না নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে খসড়া আইনে চলচ্চিত্রের বয়স ও বিষয়ভিত্তিক গ্রেডেশনের প্রস্তাব থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ার বলেন, এসব বিষয় আইনে না রেখে বিধিতে রাখতে বলা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী একাধিক সময়ে আইনে নীতি নির্ধারণী বিষয়গুলো রেখে বাকি সব বিধিতে বিস্তারিত দিতে নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হচ্ছে আইন হবে ছোট কলেবরের, বিধিতে থাকবে বিস্তারিত।

২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু : আগামী বছরের ৩০ জুন বা এর আশপাশের সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, সেতুর কাজ ৮৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

২০২২ সালেও ৫০ বছর উদযাপন : করোনা মহামারির কারণে চলমান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানাদি সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবারের মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়বে।

রাষ্ট্রপতির বিশেষ ভাষণ অনুমোদন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদে আগামী বুধবার ভাষণ দেবেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাধারণত রাষ্ট্রপতি কোনো অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেন। এটা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ভাষণ।

মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই : এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠক কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন দেখে মেয়র জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইনটি পর্যালোচনা করতে দু-একদিন সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে শুক্রবার আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় পাওয়া জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে।

Top