স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত


এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া : সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত। ফ্রিজ করা ওই অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ২১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজের ওই আদেশ দেন। একই দিন আমজাদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলাও করা হয়।শুধু আমজাদ হোসেনেরই নয়, আদালতের আদেশে দুদক তিন বছরে (চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ২১শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করেছে। এর মধ্যে ক্রোক করা সম্পদের (স্থাবর সম্পদ) মূল্য ৬২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ফ্রিজ করা সম্পদের (অস্থাবর সম্পদ) মূল্য ১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এসব সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা হয়েছে বলে দুদক ও আদালতের বিভিন্ন নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।জানতে চাইলে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুদকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অদ্যাবধি ২১শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থেই সেসব সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের অনুমতিক্রমে পরবর্তীকালে ওইসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। এই সম্পদগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা হয়েছে বলে দুদক বিশ্বাস করে। ওই সম্পদগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পাশাপাশি এই সম্পদগুলো ব্যবহার করে দুর্নীতিবাজরা যেন অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে-সম্পদ জব্দ করার এটিও একটি অন্যতম কারণ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক প্রতিকূলতার পরও দুদক যে এটি (সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ) করতে পেরেছে, তা একটি ইতিবাচক সংবাদ। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আরও ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। এটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ইতিবাচক অবদান রাখবে। একই সঙ্গে দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে।দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, সাধারণত অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আবেদন করা হয়। প্রতিটি আবেদনে আদালতের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। যথাযথ কারণ পেলেই আদালত আবেদনকৃত সম্পদ ফ্রিজ বা ক্রোকের আদেশ দেন। এসব সম্পদ ফ্রিজ বা ক্রোক করা না হলে বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কোনো আসামির রায়ে সাজা হলে তার সম্পদ বাজেয়াপ্তে সহায়ক হবে।তিন বছরে যত ক্রোক ও ফ্রিজ : তিন বছরে ফ্রিজ ও ক্রোক হওয়া সম্পত্তির পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালে দেশে ১৪ দশমিক ৪৪ একর জমি, ১৭টি বাড়ি, ১৭টি ফ্ল্যাট, ৯টি প্লট, ৪টি কমার্শিয়াল স্পেস, ৯টি গাড়ি ও ৪টি স্থাপনা আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। এছাড়া দুবাইয়ে দুটি কোম্পানির শেয়ারও ক্রোক করা হয়। একই বছর দেশে ২৮৮টি ব্যাংক হিসাব, ৬টি বিও হিসাব ও ৩৬টি সঞ্চয়পত্র/বন্ড, জামানত; পলিসি/ইন্সুরেন্স ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার ৫টি ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ১১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২১১ টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। আর একই বছর ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে।২০২০ সালে দেশে ২৫৬ দশমিক ৩৪৫ একর জমি, ৩৪টি বাড়ি/ভবন, ৩৫টি ফ্ল্যাট, ৭টি কমার্শিয়াল স্পেস, ১৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকা। একই বছর এক হাজার ১১৮টি ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর ফ্রিজ করা হয়। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য বা ওইসব অ্যাকাউন্টে ১৫২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ টাকা।চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২৭ দশমিক ৪৮৪ একর জমি, ৩০টি বাড়ি/ভবন, ১৪টি ফ্ল্যাট, ১টি প্লট ও ২৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ৩২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯২ টাকা। একই সময়ে দেশে ৯১৬টি ব্যাংক হিসাব, ৫৬টি সঞ্চয়পত্র ও বন্ড/শেয়ার, ৩টি পিস্তল, ৭টি জাহাজ ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে কানাডায় ১১টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৩টি, সিঙ্গাপুরে ৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১ হাজার ১৬৭ কোটি ৭ লাখ ১৫ হাজার ৬০৮ টাকা।

Top