গৌরনদীতে হাতুড়ি পেটায় ১০ হাফেজ আহত
খোকন হাওলাদার,বরিশাল:বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী উলূমে দীনিয়া কওমী মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের এক শিক্ষককে অবরুদ্ধ ও কেতাব বিভাগের ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় হামলাকারীদের হাতুড়ি পেটায় ১০ হাফেজ আহত হয়েছে।সোমবার সকালে মাদ্রাসার ক্লাস রুমে ও মুহতামিমের কক্ষে এবং বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এতে মাদ্রাসায় ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কেতাব বিভাগের ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।গুরুতর আহত এক হাফেজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করা হয়েছে। এদিকে রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফতি আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ও আহত ছাত্ররা জানান, ‘উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার ভাগ্নে এবং বার্থী কওমী মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী ব্যঙ্গ করে কেতাব বিভাগের ছাত্রদের প্রায়ই ডাকেন এবং অসদাচরন করে আসছিল।ব্যঙ্গ করে ডাকতে নিষেধ করায় শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি কেতাব বিভাগের ছাত্র মোঃ শাহ্জালাল ও মোঃ মাহামুদকে পিটিয়ে আহত করেছিল। বিনা কারণে শিক্ষক মানিক রোববার বিকালে কেতাব বিভাগের ছাত্র শাহ্জালালকে কিলঘুষি মেরে নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ায়।
এ ঘটনার বিচার দিতে সহপাঠীরা সোমবার সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি হাফেজ আমিনুল ইসলামের কাছে যায়। বিচার দেয়ার কারণে শিক্ষক মানিক বেপারী ক্ষিপ্ত হয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ক্লাস রুমে ঢুকে কেতাব বিভাগের ছাত্র মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাহামুদ হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে।এতে কেতাব বিভাগের ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষক মানিককে ধাওয়া করে। এ সময় শিক্ষক মানিক দৌড়ে মাদ্রাসার মুহতামিমের কক্ষে আশ্রয় নিলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাকে আধাঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।এর কিছুক্ষন পর কেতাব বিভাগের ছাত্ররা বিচার দিতে শিক্ষক মানিকের মামা বার্থী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার বাড়িতে যায়।এ সময় শিক্ষক হাফেজ মানিক ও তার মামা যুবলীগ নেতা জাফর প্যাদার নেতৃত্বে বহিরাগত ১৫-২০ জন যুবক নিয়ে হাতুড়ি, ব্যালচা, লাঠিসোটা নিয়ে শাহ্জাহান প্যাদার বাড়িতে গিয়ে জঙ্গি অপবাদ দিয়ে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।এ সময় হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কেতাব বিভাগের ছাত্র হাফেজ জাহিদুল ইসলাম, হাফেজ হাফিজুর রহমান, হাফেজ আবু ইউসুফ, হাফেজ সোয়াইব, হাফেজ হোসেন, হাফেজ মোঃ হাসানউদ্দিন, হাফেজ হাবিবুল্লাহসহ ১০ হাফেজকে (ছাত্র) আহত করে।হামলার সময় শাহ্জাহান প্যাদা বাড়িতে ছিলেন না। এ ঘটনায় কেতাব বিভাগের ছাত্র হাফেজ মোঃ সোয়াইব বাদি হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী বলেন, কেতাব বিভাগের ২ ছাত্র বেয়াদবী করার কারণে তাদের বকাঝকা দেয়া হয়েছে। আমার ও আমাদের মাদ্রাসার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কতিপয় ছাত্র কুৎসা রটাচ্ছে।মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফতি আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার নির্দেশে আমি কেতাব বিভাগের ক্লাস অনির্র্দিস্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছি।তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে এবং কেতাব বিভাগের ছাত্রদের জঙ্গি বানানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার কম্পাউন্ডে সভাপতির উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী আজিজ বেপারী আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমি এখন অসহায়।গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।