আঁধার সরিয়ে আলোর ঝলক
আলোকিত বার্তা:দীর্ঘ দেড় বছর পর সেই চিরচেনা ঘণ্টা বেজেছে স্কুল-কলেজে। করোনার ভয়কে দূরে ঠেলে নিজের প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। নাচ গান বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে করতালি চকোলেট মাস্ক ও ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়। রোববার সকাল থেকেই কলকাকলিতে মুখর ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাঠগুলোতে বসেছিল চাঁদের হাট। মুক্ত বাতাসে বন্ধুর সঙ্গে খেলায় মেতেছিল দিনভর। সকাল থেকেই প্রিয় আঙিনায় আনন্দ ধারায় ভেসেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিও লঙ্ঘন হয়েছে। সর্বশেষ যেদিন তারা স্কুল ছেড়েছে সেদিনও সবাই বসেছিল এক শ্রেণিকক্ষে। দীর্ঘ ছুটির মধ্যেই তারা উঠেছে এক ধাপ ওপরের শ্রেণিতে। সেই নতুন শ্রেণির বয়সও আট মাস পার হয়ে গেছে। এরপরও চেনা স্কুলে অচেনা নতুন শ্রেণিকক্ষ খুঁজে পেতে তাদের কষ্ট হয়নি। আগে থেকেই তাদের জন্য প্রস্তুত ছিল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা।
ঘরবন্দি জীবন থেকে মুক্ত বাতাসে, বিশেষ করে প্রিয় অঙ্গনে ফিরতে পেরে ছাত্রছাত্রীরা ছিল দারুণ উল্লসিত। সহপাঠীদের সাক্ষাৎ এই আনন্দকে আরও বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে পেয়ে শিক্ষকরাও ছিলেন আপ্লুত। এ যেন নবজীবনের আনন্দ। ৫৪৩ দিন পর ক্লাসে আসছে শিক্ষার্থীরা- এজন্য এক সপ্তাহ ধরে আয়োজনও চলেছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী করা হয়। ছিল সাজসাজ রব। ফুলের টব, ব্যানার ফেস্টুন আর রঙিন পতাকা উড়ছিল স্কুলে। স্কুলের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের তাপমাত্রা মাপা হয়। ছিল হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছিল। কোথাও বেজেছে ড্রাম। ছিল নৃত্যের আয়োজন। কোথাও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। আবার চকোলেট, মাস্ক ইত্যাদি উপহার দেওয়া হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বাইরে স্কুলের ভেতরেও যথাসম্ভব সাজানো হয়েছিল। এ যেন ভিন্ন এক আয়োজন। দীর্ঘ বিরতির পর প্রিয় স্কুল ও কলেজের প্রথম দিনটি এভাবেই স্মরণীয় হয়ে ওঠে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে।
স্কুলে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত থাকলেও অভিভাবকরা ছিলেন মিশ্র অবস্থানে। সন্তানকে স্কুলের ভেতরে পাঠিয়ে প্রায় সবাই গেটের বাইরে অপেক্ষা করেন। তাদের কারও কারও চোখে উদ্বেগ ছিল। সংক্রমণ নিয়ে সবাই কম-বেশি চিহ্নিত। তবে দীর্ঘদিন পর সরাসরি পাঠদান শুরু হওয়ায় তাদের প্রায় সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন পর ছাত্রছাত্রীদের আমরা কাছে পাচ্ছি। এজন্য সব শিক্ষকের মধ্যেই একটা পূর্ণতার অনুভূতি কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধিসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল। সবমিলে আমরা ক্যাম্পাস যথাসম্ভব শিক্ষার্থীর জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করেছি। অভিভাবকদের মূল গেট থেকে দূরে বাচ্চাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। সেখান থেকে আমরা তাদের নিয়ে আসি। বড় ছাত্রছাত্রীদের কোনো গাইড প্রয়োজন হয়নি। ছোটদের জন্য আমরা শিক্ষকরা সহায়কের ভূমিকা পালন করেছি। তিনি আরও বলেন, মহামারিকাল এখনো যায়নি। এখনো সংক্রমণ প্রত্যাশিত হারের চেয়ে বেশি। আর কতদিন লেখাপড়া বন্ধ থাকবে। আমরা একটু দেরিতে স্কুল খুলেছি। বিভিন্ন উন্নত দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আবার বন্ধ করেছে। আমি ছাত্রছাত্রীদের বলেছি, এটা কোনো ঝুঁকিই নয়, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। সবাই মিলে নিয়ম মেনে চললে আমাদের স্কুল বন্ধ করতে হবে না।
শিক্ষা কার্যক্রম ফের চালু উপলক্ষ্যে সরকারের দুই মন্ত্রণালয়েরই বাড়তি প্রস্তুতি ছিল। কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল। স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের দিকটিই মূলত প্রাধান্য পায়। এ ক্ষেত্রে নির্দেশিকা অনুযায়ী আঙিনা, ক্লাসরুম ও ওয়াশব্লক পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা সেদিকে বেশি নজরদারি ছিল। এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ওয়াশব্লকের খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ক্লাসরুম এবং আঙিনা দেখেন। একইভাবে খোঁজ নেন আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজে। সেখানের পরিস্থিতিতে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমনকি ক্লাসরুম অপরিচ্ছন্ন থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত মনিটরিং কর্মকর্তার (উপপরিচালক) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৬ আগস্ট যখন বৈঠক করেছি, তখনই সংক্রমণের হারে যে নিম্নগামী প্রবণতা দেখেছিলাম; সেটার ওপর ভিত্তি করে ধরে নিয়েছিলাম ১১ সেপ্টেম্বরে মধ্যে সংক্রমণের হার পাঁচ না হোক কাছাকাছি নেমে আসবে। তার ভিত্তিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিই। এক সপ্তাহে সংক্রমণ সাত শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের সামাজিক-মানসিক সমস্যা হচ্ছিল। আবার এটাও ঠিক যে, করোনার সঙ্গেই আমাদের অনেকদিন বসবাস করতে হবে। সে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখা যাচ্ছিল না। আমরা এই সময়টাকে খোলার উপযুক্ত বলে মনে করেছি। তবে সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে না নিয়ে অনলাইনে পাঠদান এবং অ্যাসাইনমেন্টে ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রথমদিন ক্লাসে লেখাপড়ার তেমন একটা চাপ ছিল না। শিক্ষকরা শুরুতেই করোনা মহামারি এবং এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরে বক্তৃতা করেন। ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের কেউ সহপাঠীর সঙ্গে গল্প করে আবার কেউ স্কুলের মাঠে বা আঙিনায় খেলাধুলা করে কাটিয়েছে।
ক্লাস করানোর ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা ছিল, এক বেঞ্চে একজন বসবে। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক বসানোর খবর পাওয়া গেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসসি এবং এইচএসসির এবারের ও আগামী বছরের পরীক্ষার্থী, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থীরা দৈনিক স্কুলে যাবে। বাকিরা একদিন করে যাবে স্কুলে। এ কারণে রোববার কোথাও দুই ক্লাসের আবার কোথাও তিন থেকে ৫ ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে গেছে। অর্থাৎ কমপক্ষে তিন থেকে ৭টি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা যায়নি। এরপরও যাদের স্কুল-কলেজে আসার কথা তাদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আর মাধ্যমিকে ২০ শতাংশ অনুপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক মনিটরিং করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান দুই স্তরে মনিটরিং হচ্ছে। রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪ হাজার ৪৮৮টির তথ্য মাউশি পেয়েছে বলে জানা গেছে। মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা থেকে জানা গেছে, রাজধানীর কবি কাজী নজরুল সরকারি কলেজে রোববার বিভিন্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৩১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতির হার ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। ১১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ১১৩ জন এদিন উপস্থিত ছিলেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে প্রথম শ্রেণির ৩৭৯ জনের মধ্যে ৩১১ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৮২ শতাংশ, ১০ম শ্রেণির ৪১৫ জনের মধ্যে ৩৪৩ জন উপস্থিত ছিল, উপস্থিতির হার ৮২ শতাংশ। এদিন ১৪৯ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন অনুপস্থিত ছিলেন। ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মোট ৮টি শাখায় ১২০০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১০৯২ জন উপস্থিত ছিল।মাউশির পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী প্রথম দিন ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। সরকারি স্কুল-কলেজ, বেসরকারি শীর্ষ মানের স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। প্রথমদিন যারা আসেনি তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ : দেশের অন্যতম সেরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ মনোরম সাজে সাজানো হয়েছিল। সকাল ৯টায় স্কুলে ঢুকতেই চোখে পড়ে নানান রঙের বেলুন, গাছ-দেওয়াল আর ক্লাস রুমে টাঙানো ‘সু-স্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী-অভিনন্দন প্রিয় শিক্ষার্থী’ ফেস্টুন। অধিকাংশ শিক্ষকই একই রঙের পোশাক পরেছেন। প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছেন করতালি দিয়ে। আর বাইরে অপেক্ষারত শত শত অভিভাবক। কেউ আবার হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে দারোয়ান-সবার মুখে মাস্ক। কিন্তু একে অপরকে চিনতে ভুল করছে না। স্কুল খোলার প্রথম দিন শিক্ষকরাও সহকর্মীদের সঙ্গে হাসিখুশিভাবে কুশলবিনিময় করেছেন। শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা এসেছিল মা শামীমা সুলতানার সঙ্গে। স্কুলে এসে মা-মেয়ে উভয়েই খুশি। সকাল ৮টায় স্কুলের বাইরে ফুটপাতে অপেক্ষারত মা জানালেন, তার পরিবারে আজ যেন ঈদের দিন। ৫৪৩ দিন পর মেয়ের সঙ্গে স্কুলে এলেন তিনি।
অধ্যক্ষ কামরুন নাহার যুগান্তরকে বলেন, স্কুল খোলার ভাবনাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছি আমরা। প্রথম দিন গড়ে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। আমরা অনেক খুশি। সকাল ৮টায় শুরু হয় উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। স্কুলে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার স্কুল খোলার প্রথম দিনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হয়েছে। ক্লাস শুরুর আগে স্কুল প্রাঙ্গণে কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। এছাড়া জাতীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান স্কুল পরদর্শনে যান। এ সময় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগমসহ শিক্ষকমণ্ডলী উপস্থিত ছিলেন।
স্কুল খোলার অনুভূতি জানতে চাইলে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা তাবাসসুম জানায়, দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে আমি অনেক খুশি। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলভী বলে, অনেক ভালো লাগছে। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে আগের দিনের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। স্কুলের ভেতর স্বাস্থ্যবিধি কেমন মানা হচ্ছে জানতে চাইলে যতীন্দ্র চন্দ্র যতন বলেন, শিক্ষকরা আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের পেয়ে অনেকেই আবেগ সামলাতে পারেনি। কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরেছে। একজনের পানির বোতলে আরেক জন পানি খেয়েছে।
রাজউক কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী স্কুল-কলেজগুলোয় আজ প্রাণ ফিরে এসেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে স্কুল প্রাঙ্গণ। উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী রাফসানা ইসলাম জানায়, অনেকদিন পর স্কুল খুলেছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে আমরা চাই স্কুল আর বন্ধ না হোক। রাজউক কলেজের এক শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, করোনা পরিস্থিতি যেমনই হোক, দরকার হয় সাপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে, তবুও যেন আর বন্ধ না হয়।
ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের চকলেট, ফুল ও কোমল পানীয় দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করাসহ মাস্ক পরিধান করিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করানো হয়েছে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসগুলোয় ফাঁকা ফাঁকা করে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদা আক্তার বলেন, ঘরবন্দি থেকে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ছিলাম আমরা। স্কুল খোলায় যেন মুক্তি পেয়েছি। পড়ায় মন বসাতে পারতাম না। অনলাইন ক্লাসে মজা পাচ্ছিলাম না।
দনিয়ার এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে দেখা যায়, চার শিফটে ক্লাস শুরু হয়েছে। সকালে দুই শিফট ও দুপুরে দুই শিফটে স্কুল পরিচালনা করা হয়েছে। প্রথম দিনে একই নিয়মে এসএসসি, দশম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছে। এখানেও বেশ কঠোরতা ও আনন্দের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস শুরু হয়েছে। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে একই চিত্র চোখে পড়ে। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে স্কুলটিকে। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল অনেকটাই কম। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাস শুরু হওয়ার পাশাপাশি এখানে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রথম দিনে ক্লাস করতে পেরেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করে আমরা পাঠদানের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তবে ভিন্নচিত্র দেখা গেছে বেলা সাড়ে ১১টায় মনিপুর স্কুলের (মিরপুর ২ নম্বর ৬০ ফিট) মূল শাখায়। সেখানে দুপুরের শিফটের শিক্ষার্থীরা গেটের বাইরে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে কোলাকোলি, হাগ ও হ্যান্ডশেক করছে। অবশ্য স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি দেখা গেছে। হাত ধোয়ার জন্য ১৫টি বেসিন স্থাপন করা হয়েছে।মিরপুর বাংলা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমডিসি মডেল স্কুল, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউিট, সিদ্ধার্থ হাইস্কুল, কমার্স কলেজ, এমআই মডেল স্কুল, পল্লবী ২১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেনপাড়া পর্বতা প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শ স্কুল, জান্নাত একাডেমি, ন্যাশনাল বাংলা স্কুল, ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরভী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। তবে মিরপুর ১০ নম্বর সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার সকালে দেখা যায়, অভিভাবকরা জটলা বেঁধে গল্পগুজব করছেন। স্কুলের দপ্তরি (কাম আয়া) অসুস্থ থাকায় ছুটিতে রয়েছেন। এতে স্কুল চলাকালীন বাইরের শিক্ষার্থীরা অবাধে যাতায়ত করছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। বহিরাগত অনেক শিক্ষার্থী ২তলা ও ৩লার সিঁড়ি বেয়ে ক্লাস রুমের সামনে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও সাবান পানির ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল ছিল।