দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটের প্রস্তুতি শুরু ছোট দলের - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটের প্রস্তুতি শুরু ছোট দলের


আলোকিত বার্তা:আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি-এই তিন বড় দলের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাম প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোও। ডানপন্থি হিসাবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোও থেমে নেই। করোনা মহামারির দীর্ঘ ধকল কাটিয়ে এখন সব পক্ষই নিজেদের শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে চলছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নের কাজও। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই আভাস মিলেছে।জানা গেছে, শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা ইতোমধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও বসে নেই। জোটের বাইরে বাম, ডান, মধ্যপন্থা এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলোও ঘর গোছাচ্ছে। ভবিষ্যতে জোটবেঁধে নির্বাচনের ভাবনা মাথায় থাকলেও, আপাতত তারা এককভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে আছে দুই বছরেরও বেশি সময়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যারিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আছে প্রধান বিরোধী দলের আসনে। খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করে এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে মাঠের বড় দল বিএনপি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসাবে সংসদে আছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি, তরীকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসাবে সংসদে আছে গণফোরামও।

এ প্রসঙ্গে রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি লেন, ‘করোনায় আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা অনেকটাই স্তিমিত ছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় জোরেশোরে দল গোছানোর কাজে হাত দেব।’ তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচন আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছি। যেহেতু ১৪ দল এখনো আছে। ভবিষ্যতে কী হয় তা সময় বলবে। আপাতত আমরা দল গোছানোর পাশাপাশি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রসঙ্গত, রাশেদ খান মেনন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেয়ের কাছে অবস্থান করছেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন চলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে। এর পরপরই আমরা পুরোদমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করব। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটে আছি। জোটের প্রধান শরিক দল কী চায় তা যেমন দেখার বিষয় আছে, এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।

জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এমপি এবং তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি আলাদাভাবে সঙ্গে কথা বলেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক এই তিন দলের তিন শীর্ষ নেতাই জানিয়েছেন তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ জোটের বাকি শরিক দলগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (মোজাফফর), গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং সাম্যবাদী দলের ভোটের রাজনীতিতে তেমন একটা প্রভাব না থাকায় এ নিয়ে আগ্রহও কম। তারা তাকিয়ে আছে মূল দল আওয়ামী লীগের দিকে।

সূত্র জানায়, টানাপড়েন যাই থাকুক না কেনো আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী ভোটে অংশ নেবে এই জোটের বড় শরিক জামায়াতে ইসলামী। সেই প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গেছে। দলটি এবার পুরো শক্তি নিয়েই মাঠে নামবে। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য তাদের। তবে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি মাঠে চূড়ান্ত সমঝোতা হলে তখন পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।

এই জোটের আরেক প্রধান শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির- এলডিপি। দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বর্তমানে ওমরা পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই ফোনে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি আছে। সময় এগিয়ে এলে এই প্রস্তুতি আরও জোরদার হবে।’ তিনি বলেন, তবে এটাও ঠিক আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ নেই। তাই সবার আগে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশদলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম রোববার বলেন, ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে আমরা নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছি। ইতোমধ্যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সবার মতামত নিয়ে আগামী ১৬ ডিসেম্বর একটি খসড়া মূল কমিটির কাছে জমা দেবে। তারপর দলীয় ফোরামে নির্বাচনি ইশতেহার চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করব।

এককভাবে, নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দলীয়ভাবেই নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছি। তবে এককভাবে না জোটগতভাবে অংশ নেব-তা এখনই বলা কঠিন। যেহেতু আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি, তাই এ বিষয়ে জানতে হলে আরও কিছু দিন সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন আরেকটি জোট হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের প্রধান শরিক দল গণফোরাম আপাতত দুই ভাগে বিভক্ত। গত নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার তারা অভ্যন্তরীণ সংকট মেটাতেই এখন ব্যতিব্যস্ত। তবুও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান এমপি রোববার বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে কাউন্সিল করতে যাচ্ছি। এর পরপরই পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্ততি নিয়ে মাঠে নামব।’জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভাগ হয়েছে। এক দিকে দলটির বর্তমান সভাপতি আ স ম আবদুর রব। আরেক দিকে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন। এই জোটের আরেক শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ভোট করার পরিবেশই তো নেই। প্রস্তুতি নিয়ে কী হবে?

বিশদলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (ভাসানী), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল এবং জাতীয় দলের ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব না থাকায় তারাও তাকিয়ে আছে মূল দল বিএনপির দিকে। তবে এই জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাফর) ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। দুই জোটের বাইরে বাম প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে পথ চলছে। ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই এরাসহ মোট ৯টি বাম প্রগতিশীল ঘরানার দল বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা জোটগতভাবেই অংশ নেয়। আগামী নির্বাচনও তারা জোটগতভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এই জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমরা মনে করি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আগে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজপথে সরকারকে পিছু হটাতে বাধ্য করতে না পারলে সুষ্ঠু ভোট এ দেশে আর সম্ভব নয়।র বাইরে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এই নির্বাচনের পরপরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে বলে জানিয়েছেন দলটির প্রচার উপ-কমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। গত নির্বাচনেও এককভাবে অংশ নিয়েছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পর আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হবে।’
ছাড়াও খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, বটগাছ প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, রিকশা প্রতীক নিয়ে খেলাফত মজলিস, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টিসহ ডানপন্থি এবং ইসলামী ঘরানার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও বসে নেই।জোটের বাইরে থেকে তারাও আপাতত নিজেদের মতো করে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Top