ভার্চুয়াল কোর্টের সুফল পাচ্ছেন না অধিকাংশ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা
আলোকিত বার্তা:সারা দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট (ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে) পরিচালিত হলেও অধিকাংশ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী এর সুফল পাচ্ছেন না। প্রযুক্তিগত অদক্ষতাসহ নানা কারণে অধিকাংশ আইনজীবীই এই সুবিধাবঞ্চিত। করোনাকালীন বর্তমান সময়ে আদালত খোলা না থাকলেও ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। উচ্চতর আদালতে ভার্চুয়ালি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সারা দেশের নিম্ন আদালতগুলোয় ভার্চুয়ালি শুধু জরুরি মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।জানতে চাইলে আইনজীবী নেতা কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, করোনা মহামারির এই সময়ে ভার্চুয়াল আদালতগুলো জরুরিভিত্তিক অনেক মামলা দ্রুতসময়ে নিষ্পত্তি করেছে। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে বিচারিক আদালতে বিচারের শেষ সমাপ্তি-ট্রায়াল করা, সাক্ষী উপস্থাপন, সাক্ষী জেরাসহ যাবতীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাইলে বর্তমান সিস্টেমকে আরও সংস্করণ করতে হবে। ভার্চুয়াল কোর্টে জরুরি বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে। জরুরি বিষয়গুলো অল্পকিছু আইনজীবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অধিকাংশ আইনজীবী লকডাউনে বেকার হয়ে আছে। কারণ তাদের প্রধান কাজই হলো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় আসামিদের হাজিরাসহ ট্রায়াল ম্যাটারগুলো সমাধান করা। বর্তমানে সেসব কাজ থেকে আইনজীবীরা দূরে সরে আছেন। বিশেষ এই পরিস্থিতিতে করার কিছুই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। অন্যান্য পেশার মতো আইনজীবীদের জন্য করোনাকালীন প্রণোদনা দেওয়া হলে আইনজীবীদের এমন পরিস্থিতি হতো না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ আইনজীবীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার সুফল পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরাও অনেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন। অনেক সিনিয়র আইনজীবী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে করতে হবে জানেনই না। উচ্চ আদালতের পাশাপাশি নিম্ন আদালতেও ট্রায়াল ম্যাটার নিষ্পত্তির সুযোগ থাকতে হবে। সারা পৃথিবী যেহেতু ডিজিটালাইজ হচ্ছে। ভার্চুয়াল কোট পরিচালনা তারই একটা অংশ। কোর্ট প্রাঙ্গণ নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনাকে আরও অগ্রসর করতে হবে।বর্তমানে বিচার কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হলেও ২০১৭ সালের আগ থেকেই এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আইন কমিশন। ২০১৮ সালের শুরুতে ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের দুর্নীতি মামলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রায় ঘোষণা হয়। এ বিষয়টি আদালতকে জানিয়ে ওই বছরের মে মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অগ্রসর করার আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা। ওই সময় বিচার কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ফের আলোচনায় আসে। পরে তা আর আলোর মুখ দেখিনি।দীর্ঘ সময় পর করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের ২১ মে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ নামের ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকেই অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। গত বছরের ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরও আগে গত বছরের ২৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
অধ্যাদেশ বিধান অনুসারে আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতো হাইকোর্ট বিভাগ সময়ে সময়ে এ বিষয়ে প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে। অধ্যাদেশে বলা হয়, জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে। অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতি বাধ্যবাধকতার শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।