পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ইতিহাস ! সতের কোটি বাঙালির জয়
আলোকিত বার্তা:১৯৭১ থেকে ২০২১। বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে সৃষ্টি হয়েছে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ইতিহাস। ৩০ লাখ শহিদের তাজা রক্ত, আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা।পৃথিবীতে এত দাম দিয়ে আর কোনো দেশকে এ পতাকা কিনতে হয়নি। তাইতো বাঙালি স্বপ্ন দেখছে সোনার বাংলা গড়ার। এটি শুধু একটি দেশের স্বাধীনতাই নয়, বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পরাধীনতার শিকল ভেঙে বের হওয়ার প্রেরণাও বটে।শুধু তাই নয়, কীভাবে একটি নিরস্ত্র জাতি শুধু মনোবলের জোরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি বাহিনীকে মাত্র ৯ মাসে হার মানাতে পারে-তা সারা বিশ্বে স্থাপিত হয়েছে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো বঞ্চনা থেকে মুক্তির ইতিহাস, বাংলাদেশের মানুষের আবেগ এবং উচ্ছ্বাস। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুটি-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। কিন্তু গত ৫০ বছরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে ঈর্ষণীয় অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের।এটি সতেরো কোটি বাঙালির জয়। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নেওয়া ১০ দিনে কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ। এদিন সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোই নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর বাঙালি মাত্র ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে।আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দেশের সব সব নাগরিক এবং প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।সামগ্রিকভাবে দেশের অর্জনের তালিকা দীর্ঘ। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি। এর অন্যতম হলো দারিদ্র্যবিমোচন। কারণ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।আর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে এ দুই খাতে সামগ্রিক গুণগতমান আরও উন্নতি করা জরুরি। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশের সব মানুষকে বাসস্থানের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও চলতি বছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরের চেয়ে যা ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা বেশি।তবে এগুলোর সুষ্ঠু বণ্টন এবং বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো জরুরি। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ থেকে উন্নয়নশীল থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি এসেছে। বিশ্বব্যাংক থেকে স্বীকৃতি মিলেছে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার।এসব অর্জন বাংলাদেশের সক্ষমতার পাশাপাশি মর্যাদাও বাড়িয়েছে।এছাড়া মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নারীর ক্ষমতায়, গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় বড় ভৌত অবকাঠামো অর্জনের পাল্লাকে অনেক ভারি করেছে।আরও আছে নিজস্ব স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন চলমান মেগা প্রকল্প। আর সবকিছুকে ছাপিয়ে ক্রিকেটের অবিশ্বাস্য উন্নতি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে নতুনরূপে পরিচিতি দিয়েছে। এসেছে বিশ্ব শান্তিতে নোবেলও।এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশটি এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’।যদিও সামনের দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জও কম নয়। সম্পদ, আয় এবং ভোগের ক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্য রয়েছে। মোট সম্পদের প্রায় ৫২ শতাংশই উচ্চ শ্রেণির ৫ শতাংশ মানুষের হাতে। আর নিম্ন শ্রেণির ৫ শতাংশ মানুষের হাতে মাত্র দশমিক ০৪ শতাংশ।দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার বন্ধ করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করাই হবে মূল কাজ। এগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব কমানো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে পরিমাণগত সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি হয়েছে। এর সুফল সবার কাছে পৌঁছানো জরুরি। তাদের মতে, সর্বজনীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বারবার হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে স্থানীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য নিরসন, দক্ষতা ও কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জেন্ডার বৈষম্য দূর করা জরুরি।জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণ। ইতোমধ্যে দেশের দরিদ্র পরিস্থিতি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র সবার কাছে পৌঁছেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে হার অর্জন রয়েছে। কারণ শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে শিক্ষার মানে পিছিয়ে রয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতেও উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ তৈরি করার পাশাপাশি ওষুধের মূল্যও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের গুণগত মান এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি।এ মান বাড়াতে সরকারকে কাজ করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার হার বাড়লেও মান বাড়েনি। এখান সরকারকে নজর দিতে হবে। অপরদিকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে পেশাদারভাবে দাঁড়াতে পারেনি।এর মধ্যে পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, সংসদ এবং নির্বাচন কমিশনসহ প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায় সব জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এছাড়াও দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কারণ কর না বাড়লে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।স্বাধীনতার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে কিছু থাকবে না। সেখান থেকে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারীশিক্ষাসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বিশাল অর্জন হয়েছে।
এছাড়া ইতোমধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণে সুপারিশ মিলেছে। সেখানে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বেশ ভালো অবস্থান। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।কারণ, অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রপ্তানি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের রফতানি খাত গার্মেন্টনির্ভর। কোনো কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যটি মার খেলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।এ খাতে রপ্তানিতে পণ্যের বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ, কয়েক বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে না। করোনায় তা আরও কমে গেছে।এ অবস্থায় বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং ইজ বিজনেস (সহজে ব্যবসা করা) রিপোর্টসহ বেশকিছু সূচকে ভালো করতে হবে।মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালে বিশ্বে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন মানচিত্র। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্তব্য করেছিলেন।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আলোচ্য সময়ে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক সূচকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।বাংলাদেশের মানুষের উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনার বাস্তবায়ন ও উদ্যোগী মনোভাবের কারণে দেশটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু মৃত্যুর হার, দারিদ্র্যবিমোচন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বৈদেশিক শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জননিরাপত্তা, সামাজিক বৈষম্য নিরসনসহ প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ।বিশেষ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকার অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। মানুষের গড় আয়ু, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্যবিমোচন এবং মাথাপিছু আয়ে যেসব দেশ বিশ্বে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর মধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতিও মিলেছে। যে দেশকে শোষণ, বঞ্চনা, নানাবিধ আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছিল পাকিস্তান, আজ তারাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে। শুধু তাই নয়, তাদের সংসদেও বাংলাদেশের উন্নয়নের উদাহরণ টানা হয়।বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ কোটি ডলার। বর্তমানে তা ৪৪ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির রিজার্ভের অর্থ দিয়ে মাত্র ২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।আমদানি মাত্র ২৮ কোটি ডলার থেকে ৫৩ বিলিয়ন, রপ্তানি ৩৩ কোটি থেকে পৌঁছেছে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া শিল্প খাতের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ৫০ বছরে কৃষিকে ছাড়িয়ে গেছে শিল্প। হাল প্রকৌশল, সফটওয়্যার ও ওষুধ শিল্প অনেক এগিয়েছে।বর্তমানে গার্মেন্ট শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। চীনের পরেই আমাদের অবস্থান। এ গার্মেন্টই বিশ্বে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’কে পরিচিতি দিয়েছে। উন্নয়ন দেখতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
ওই সময়ে তিনি বলেছিলেন, শুধু বলার জন্য নয়, দারিদ্র্যবিমোচনে সত্যিই আজ ‘বিশ্বে রোল মডেল’।জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাকিস্তান আমলে উন্নয়ন থেকে আমরা ছিলাম বঞ্চিত। অন্যান্য দেশের তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমাদের স্থিতিশীলতা সন্তোষজনক।বিখ্যাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস ১১টি উদীয়মান দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশ রয়েছে এ তালিকায়।সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনায় থাকা সরকারের ধারাবাহিক অবদান রয়েছে। স্বাধীনতার মাত্র ৫ দশকেই বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।চ্যালেঞ্জ : পরিমাণগত সূচকে অনেক অর্জন হলেও সীমাহীন বৈষম্য রয়েছে। গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট (কোনো দেশের আয় ও সম্পদের অসমতা বোঝাতে ব্যবহৃত সূচক) অনুসারে উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের মোট সম্পদের ৫১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
আর নিম্ন শ্রেণির ৫ শতাংশের কাছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া মোট আয়ের ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশই উচ্চ শ্রেণির ৫ শতাংশ মানুষের দখলে। আর নিম্ন শ্রেণির ৫ শতাংশ মানুষের মোট দশমিক ২৩ শতাংশ। এ ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে।সরকারই বিষয়টি স্বীকার করছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে দুর্নীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে এ দুর্নীতি রোধ করতে হবে।এছাড়াও অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির তথ্য অনুসারে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এটি রোধ করা জরুরি।অন্যদিকে দেশের আর্থিক খাত অত্যন্ত দুর্বল। ব্যাংক ও পুঁজিবাজার দুই খাতের অবস্থাই খারাপ। দুই খাতে ব্যাপক সংস্কার জরুরি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ।স্বাধীনতার ৫০ বছরে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা যায়নি। এছাড়াও বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।অর্থাৎ কর্মক্ষম জনসংখ্যা বিশাল। কিন্তু এরা দক্ষ নন। ফলে জনশক্তি বাড়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং বিভিন্ন কমিশনেও সংস্কার জরুরি। ৫০ বছরেও কার্যকর জাতীয় সংসদ গড়ে ওঠেনি।সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলতে পারেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।