মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে বরিশালে সক্রিয় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র
নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশের ন্যায় বরিশাল অঞ্চলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত এজেন্টেদের বিরুদ্ধেও আছে নানান অভিযোগ। কোনভাবেই যেনো এই চক্রটির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। কলেজ শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিতে সংঘবদ্ধ চক্র অপরাধ জগত দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এহেন অপরাধের সাম্রাজ্য মূলোৎপাটনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশু দৃৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল। এদিকে, ব্যক্তিগত নাম্বারের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ নানান কায়দার কৌশলে হাতিয়ে নিতে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে গড়ে উঠছে সংঘবদ্ধ চক্র। বিভিন্ন ধরণের কৌশলীপন্থায় বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পিনকোড নাম্বারগুলো চুরি করে। এবং কলেজের সংশি¬ষ্ট শাখা থেকে শিক্ষার্থীর নাম, রোল ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে চক্রের সদস্যরা। অত:পর কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সেলফোনে (কলেজে যে নাম্বার দেয়া) কলেজ শিক্ষক পরিচয় দিয়ে বলা হয়-তোমার নাম এটা, আর নাম্বার কী এটা? চক্রের সদস্যদের ফোনে বলা শিক্ষার্থীর নাম রোল নাম্বারও মিলে যায়। এরকম প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থী তাৎক্ষনিক হ্যা বলে যে এটাই আমার নাম এবং রোল নাম্বার। পরবর্তীতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর বিকাশ নাম্বারে দেয়ার কথা বলে। একইসঙ্গে প্রকাশ করে, তোমার নাম্বারে তো টাকা যাচ্ছে না,সমস্যা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তুমি ২৪ হাজার ৫’শ টাকা তোমার মোবাইলের বিকাশে ইন করালে উপবৃত্তির ১৫ হাজার টাকা পেয়ে যাবা। পরে তোমার বিকাশ এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিবা। চক্রের কৌশলী ফাঁদে পড়ে শিক্ষার্থীরা এজেন্ট থেকে ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে টাকা ইন করার কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রতারক চক্রের নাম্বারে ক্যাশ আউট হয়ে যায়। এরকমই একটি ঘটনা ১০ মার্চ বুধবার বিকেলে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর ক্ষেত্রে ঘটেছে। কলেজ ছাত্রী সূত্র জানায়-প্রতারণা চক্রটি বিকাশের ১৫ হাজার টাকা লুটে নিয়েছে। ১০ মার্চ বুধবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে নলছিটির আমিরাবাদ বাজারের জেনারেল স্টোর নামের বিকাশ এজেন্ট থেকে ওই ছাত্রী তার মোবাইল নাম্বারে ১৫ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন। ছাত্রী এ্যাকাউন্ট চেক করে ক্যাশ ইনের ১৫ হাজার টাকা আসার বিষয়টি নিশ্চিতও হয়। কিন্তু কয়েক মিনিটের মাথায় বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে ছাত্রীর বিকাশ এক্যাউন্ট চেক করতে গিয়ে দেখেন ক্যাশ ইন করা ১৫ হাজার টাকা অপর একটি বিকাশ মোবাইল নাম্বারে ক্যাশ আউট করে প্রতারক চক্রটি। ক্যাশ আউট করা প্রতারক চক্রের নাম্বারটি হলো ০১৬১০৪৭৭১৫৯।
এরআগে বুধবার দুপুরে চক্রটি কলেজ ছাত্রীকে ফোন দিয়ে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ এর শিক্ষক আসাদুজ্জামান স্যার পরিচয় দিয়ে বলা হয়, ২৪ হাজার টাকা তোমার মোবাইল নাম্বারে এজেন্ট থেকে বিকাশে ইন করলে কলেজের উপবৃত্তির ১৫ হাজার টাকাও বিকাশে আসবে। নির্ধারিত অর্থ তোমার বিকাশে না ইন করালে উপবৃত্তির টাকা যাবে না। কলেজ ছাত্রী স্যারের পরিচয়ে সরলমনে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার আমিরাবাদ বাজারের জেনারেল স্টোরের বিকাশ এজেন্ট নাম্বার থেকে নিজের ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে ১৫ হাজার টাকা ইন করে। কিছুক্ষন পর ইন করা ১৫ হাজার টাকা প্রতারক চক্র ক্যাশ আউট করে নিয়ে যায়। নলছিটির আমিরাবাদ বাজারের জেনারেল স্টোরের বিকাশ এজেন্টের ০১৭৭৩২৭০২৬২ নাম্বার দিয়ে ছাত্রীর বিকাশ নাম্বারে ক্যাশ ইন করা হয়। এসব বিষয়ে মহিলা কলেজের শিক্ষক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়নি। আর এভাবে ফোন দিয়ে ছাত্রীদের বিকাশ নাম্বারে টাকা ইন করলেই যে উপবৃত্তির টাকা পেয়ে যাবে, এরকম বিষয়টি কলেজ থেকে বলা হয়নি। যে নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট করা হয়েছে, ওই নাম্বারটি আইডেন্টিফাই করতে হবে। এজন্য আইনগতপন্থায় গিয়ে নাম্বারটি ট্রাকিংয়ের ব্যবস্থা করে চক্রের সদস্যদের চিহিৃতসহ আইনের আওতায় আনাটা অত্যাবশ্যাক। ক্যাশ আউটের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের ০১৬১০৪৭৭১৫৯ নাম্বারে এ প্রতিবেদক ফোন দিলে প্রথম একজন রিসিভ করেন। এই নাম্বারে ক্যাশ আউটে অর্থ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কিভাবে কোন নাম্বারে ক্যাশ আউট হয়েছে। এরপর আরেকজন ফোনটি ধরেন। গণমাধ্যমের কর্মী পরিচয় দিয়ে তার কাছে ক্যাশ আউটে অর্থ তুলে নেয়ার বিষয় জানতে চেয়ে প্রতিবেদক তাদের ঠিকানা-অবস্থান জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে বলে এটা বরিশাল। বরিশাল কোথায় এমন প্রশ্নে চক্রের এক সদস্য বলেন, এটা ঝালকাঠি। এরপরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সেলফোনটি বন্ধ করে রাখে। এই প্রতারক চক্রকে অনুসন্ধানে চিহৃিত করে আইনের আওতায় আনতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের প্রতারণার শিকার প্রতারিতরা।