দুর্নীতি বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতি বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে


আলোকিত বার্তা:দেশে সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে-এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সব খাতের দুর্নীতি নির্মূল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একার কাজ নয়।মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটি, সরকারি কেনাকাটায় তদারকি সংস্থা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক বিভাগ, এনবিআর এবং সেবা খাত জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।শুধু তাই নয়, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে বিচার ব্যবস্থাসহ সব প্রতিষ্ঠানকে। অন্যথায় দুর্নীতি দমন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।বিশ্লেষকদের আরও অভিমত-সরকারকে দুর্নীতি নির্মূলের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা)’ নীতিতে অটল থাকতে হবে। দুর্নীতি থাকলে দেশে সুশাসন থাকবে না। এখন ভাবতে হবে কোনটা আমরা বেছে নেব।সোমবার রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯-এ দুর্নীতি দমনে উঠে আসা বিভিন্ন সুপারিশ এবং সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাছে উল্লিখিত মন্তব্য করেন চার বিশ্লেষক।তারা আরও বলেন, দুদকের প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশ উঠে আসে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ উপকৃত হবে। সরকারের ভাবমূর্তি আরও বাড়বে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই মূলত আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। দুর্নীতি এখন সর্বব্যাপী। আমলাতন্ত্রের সংস্কার ছাড়া এ দুর্নীতি বন্ধ হবে না।এছাড়া সরকারের বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি বন্ধে কমপক্ষে ৪০ দফা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-স্থায়ী সিভিল সার্ভিস সংস্কার কমিশন গঠন, থানাগুলোর দায়িত্বে এএসপি নিয়োগ, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস যুগোপযোগী করা এবং ন্যায়পাল নিয়োগ। সরকারের ২৮টি সংস্থায় গবেষণা করে এ সুপারিশ দেওয়া হয়।এদিকে দুদক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ মঙ্গলবারবলেন, আমি দুর্নীতি বন্ধের বিষয়ে সোমবার যা বলেছি, তা নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলেছি।আমি মনে করি, দেশে সুশাসন দরকার। চারপাশজুড়ে থাকা দুর্নীতি বন্ধ না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুশাসন থাকলেই সমাজে কেউ বেশি সুবিধা পাবে, কেউ বঞ্চিত হবে, তা হবে না।কাজ করতে গিয়ে আমাদের যেসব ব্যর্থতা ছিল, পরবর্তী কমিশন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও সরকারের দপ্তরগুলোয় একজন প্রধান আছেন।

আমি মনে করি, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বন্ধে ওই বিভাগের প্রধানকে প্রথমে জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে। তিনি জবাবদিহি করতে বাধ্য হলে তার অধীন সবাই এক কাতারে আসবে।এতে পুরো প্রতিষ্ঠান শুদ্ধাচারের আওতায় আসবে। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা দুর্নীতি করে, তাদের তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা থাকা দরকার।এর জন্য যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করতে হবে। কাউকে দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য যেমন শাস্তি দেবেন; ঠিক যারা ভালো কাজ করেন, তাদেরও পুরস্কৃত করা দরকার।তিনি বলেন, দুদক এককভাবে সব দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবে-এমনটি আমি মনে করি না।তাদের পাশাপাশি সংসদীয় কমিটি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাদের কাজও তদারকি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদক নিজ থেকে যেসব অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ করেছে, এর ফলাফল পুরোটাই দেশবাসীকে জানাতে হবে।কেন তা প্রকাশ করা হবে না। আমি মনে করি, দুদককে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, প্রশাসনিক দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে জড়িতদের জেল-জরিমানার আওতায় আনতে হবে বিভাগীয় ভাবেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রতিবেদন পড়ে আছে। কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য রেগুলেটরি কমিশনকেও শক্ত হতে হবে।দুদকে অভিযোগ আসার আগে যেসব জায়গায় দুর্নীতি হয়, সেই জায়গায় দুর্নীতির ছিদ্রপথ বন্ধ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দুর্নীতি বন্ধের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসন থাকতে হবে। জবাবদিহি থাকতে হবে। সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে।প্রয়োজনে দেশে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থারও সংস্কার দরকার। যাতে দুর্নীতির কোনো মামলা বিচারে গেলে ঝুলে না থাকে।যাতে দ্রুত বিচার হয় দুর্নীতিবাজদের। তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধে সরকারের আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। সেটা দুদকের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতির নেপথ্যে রুই-কাতলা থাকে। রাঘববোয়াল থাকে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।আমি মনে করি, দেশের বিদ্যমান দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কতগুলো পদ্ধতির সংস্কার করা দরকার। দুদক যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে মনে করি।দুদকের আইনে কোনো ঘাটতি আছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট লোকদের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক না।সংসদীয় কমিটিকে আরও গতিশীল করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক এমপি, রাজনীতিবিদ দুর্নীতি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

Top