আত্মত্যাগ,অহংকার,চেতনা আর গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি
আলোকিত বার্তা:আত্মত্যাগ,অহংকার,চেতনা আর গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হলো।মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের এই মাসে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বাঙালি।সেই আন্দোলন দমাতে ২১ তারিখ চরম রুদ্র রূপ ধারণ করেছিল পাকিস্তানি সরকার। মিছিলের ওপর গুলি চলে। ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয় বাংলার দামাল ছেলেদের তপ্ত রক্তে।ভাষার মান প্রতিষ্ঠায় বিলিয়ে দেন নিজের প্রিয়তম প্রাণ। আর এই প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলা ভাষার মর্যাদা।ভাষা আন্দোলনে সফলতার পর বাঙালি মনোনিবেশ করে স্বাধিকার আন্দোলনে। দীর্ঘ ২৩ বছরের লড়াই-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয় লাল-সবুজের পতাকা আর একটি সবুজ-শ্যামল ভূখণ্ড।স্বাধিকার আন্দোলনের এই বীজ রোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই। তাই তো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে এত তাৎপর্যমণ্ডিত। সে কারণে এ মাস এলেই আবেগাপ্লুত হয় বাঙালি।
ভাষাপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে নব আবেগে শানিত করে চেতনা। তাই তো ফেব্রুয়ারি বাঙালির অবিনাশী চেতনার অফুরন্ত ঝরনাধারা। নানা অনুষ্ঠান আর আনুষ্ঠানিকতায় বাঙালি উদ্যাপন করে ভাষার মাস।সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বইপড়ার প্রতি আগ্রহান্বিত করাসহ সার্বিক জ্ঞানচর্চায় উজ্জীবিত করার কাজের বড় অংশ এ মাসকে ঘিরে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এবারের বাস্তবতা ভিন্ন।সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত আর স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবার আশানুরূপ দেখা যাবে না। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর কেন্দ্রীর কর্মসূচিতে হয়তো ভাটা দেখা যাবে।ইতোমধ্যে অমর একুশে বইমেলা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৮ মার্চ শুরু হবে এই মেলা। যদিও সময়মতো একুশে পদক ঘোষণা হবে। একুশের দিনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ কর্মসূচি উদ্যাপনের ঘোষণাও এসেছে।বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ও সাবেক শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ফেব্রুয়ারির সঙ্গে আমাদের জাতিসত্তার বা জাতীয় চেতনার উন্মেষের সম্পর্ক।ভাষার মর্যাদা উচ্চকিত করার লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের এ মাসে আমাদের পূর্বসূরিরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ আরও অনেকের বুকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। তিনি বলেন, এই আন্দোলনটি শুধু রাষ্ট্রভাষার দাবি আদায়ের আন্দোলন ছিল না। এর মধ্যেই রোপিত হয় স্বাধীনতা ও মুক্তির আন্দোলনের বীজ।এরই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়। যার ফল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শোকের নয়; বরং শক্তিরও। কারণ, আমরাই সেই বাঙালি জাতি যারা ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছি। ভাষার জন্য বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর।এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিবসটি বিশ্বের ভাষাপ্রেমী অন্য জাতিগুলোও উদ্যাপন করে আসছে।