দুটি বিষয় চিন্তায় ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে
আলোকিত বার্তা:শূন্য হওয়া চার সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দুটি বিষয় চিন্তায় ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।তা হল- দলের অভ্যন্তরীণ অনৈক্য এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি। সিরাজগঞ্জ-১ ও নওগাঁ-৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলেও ভিন্ন চিত্র ঢাকার দুই গুরুত্বপূর্ণ আসনে।ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনে দলীয় নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা ছিলেন তাদের সবাইকে এখনও মাঠে দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দু-চারদিন প্রচারে নামলেও ভেতরে ভেতরে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নৌকার বিজয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন,দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ সময় তিনি দলের সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান। এদিকে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। দলীয় নেতাকর্মীরা যেন সকল বিভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন তিনি।অন্যদিকে বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনী এলাকা সফর করছেন ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু উৎসবের এ ভোটেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং করোনা মহামারীর কারণে ভোটার সংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা নিয়ে চিন্তায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।দলটির নেতারা বলছেন, উপনির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা ও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা।ঢাকা-৫ আসন : হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য হয়। প্রয়াত এমপির ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলসহ এই আসনে আরও ১৯ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
পরে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। পরে তার পক্ষে কার্যক্রম শুরু করতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রমে স্থানীয়ভাবে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্নাকে, যিনি নিজেও এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। জানা গেছে, নির্বাচনের অল্প কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর হয়নি। কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর পক্ষে এখনও মাঠে নামেননি অনেক নেতা।ঢাকা-১৮ আসন : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। তৃণমূলের এই নেতা এর আগে দীর্ঘদিন বৃহত্তর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।সিরাজগঞ্জ-১ আসন : এদিকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে এখনও অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধী নেই। এই আসনের নৌকার প্রার্থী জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নাতি এবং মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে সবাই।এই আসনে এবার জয়ের সঙ্গে আরও দু’জন দলীয় মনোনয়ন কিনেছিলেন। তারা হলেন মো. শেহরীন সেলিম ও অমিত কুমার দেব। জানা গেছে, তারা দু’জন সশরীরে প্রার্থীর পক্ষে মাঠে না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন।আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয় এর আগেও ২০০৮ সালে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আজ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন ফরম দাখিল করবেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।নওগা-৬ আসন : প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের স্ত্রীসহ ৩৪ জন এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলালকে মনোনয়ন দেয়া হয়।এরপর তার অনুসারীরা যেমন উল্লাস করেছেন অন্যদিকে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল। আওয়ামী লীগের এই দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একাধিকবার এই আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে করেছেন। প্রথমে তিনি যারা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তাদের নিয়ে বসেছিলেন। পরে তিনি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেন।