দীর্ঘদিন পদোন্নতি বন্ধ কর্মচারীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ
আলোকিত বার্তা:ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (সহকারী তহশিলদার) পদে দীর্ঘদিন পদোন্নতি বন্ধ থাকায় পদোন্নতিযোগ্য তিন হাজারের বেশি কর্মচারীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ২০০১ সালের বিধিমালা অনুযায়ী সর্বশেষ ২০১৩ সাল পর্যন্ত পদোন্নতি দেয়া হয়। চতুর্থ শ্রেণির পদ অফিস সহায়ক (পূর্বের পদ এমএলএসএস), প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যান থেকে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।কিন্তু নতুন করে পদোন্নতি বিধিমালা প্রণয়নের অজুহাতে গত ৭ বছর ধরে এ পদে আর কাউকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এমনকি ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পদোন্নতি বিধিমালার যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে, সেখানে অফিস সহায়কদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। সূত্র জানায়, চরম বৈষম্যে ও বিষয়টি জানার পর প্রতিকার ও ন্যায়বিচার দাবি করে ৬ জুলাই ভূমি সচিবের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ভূমি প্রশাসন (রাজস্ব) সরকারি কর্মচারী সমিতির নেতারা।সমিতির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া ও সদস্য সচিব আজিজুল হক স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে তাদের প্রতি বৈষম্যের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, তাদেরকে ১৯৮৪, ১৯৮৫ ও ২০০১ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী সংশোধিত নিয়োগবিধিতে পদোন্নতির সুযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রুল রয়েছে। সেখানে তাদেরকে পদোন্নতিবঞ্চিত করার সুযোগ নেই। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, তাদের পদটি তো কখনও ব্লক পদ ছিল না। পদোন্নতিযোগ্য পদ হিসেবে তারা এ পদে যোগ দিয়েছেন।
১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কুচক্রীমহলের ইন্ধনে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। তারা পদোন্নতি পেলে যাদের সমস্যা হবে, তারা নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে আসছেন। তারা বলেন, নতুন বিধিমালায় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতির বিধান রাখা হলেও অফিস সহায়ক থেকে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। গত মার্চ মাসে বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে আইনগত ভেটিংয়ের জন্য বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।যদিও আইন মন্ত্রণালয় এখনও তাদের মতামত প্রদান করে নথিটি রিলিজ করেনি। বিধিমালার অসঙ্গতিগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা করতে আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং বিভাগ সময় নিচ্ছে। তারা বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে ৩ হাজারের বেশি পদোন্নতিযোগ্য অফিস সহায়ক চরম হতাশা নিয়ে দিন পার করছে। কেননা একই বছরে চাকরিতে যোগ দেয়া অনেকে পদোন্নতি পেয়ে গেলেও তারা এখনও চতুর্থ শ্রেণির পদে বসে আছে। তারা বলেন, পদোন্নতির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক বা সমমানের শর্ত থাকুক।
তাদের কোনো আপত্তি নেই। কেননা পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা বেশিরভাগ স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। এ বিষয়েও ভূমি সচিব বরাবর ১৫ জুন তারা পৃথক আবেদন জমা দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, তাদের প্রাপ্য পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে নিয়োগবিধি প্রণয়ন তারা মানবেন না। তাছাড়া সরকারি চাকরিতে কোনো সুবিধা একবার প্রদান করে তা বাতিল কিংবা প্রত্যাহার করা যায় না।প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ২৫ অক্টোবর তহশিলদার ও সহকারী তহশিলদার নিয়োগবিধি-১৯৮৪ সংশোধন করা হয়। সেখানেও চতুর্থ শ্রেণির সব পদ থেকে সহকারী তহশিলদার পদে ২০% পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়। যোগ্যতা ছিল ফিডার পদে ৫ বছরের চাকরি এবং এসএসসি পাস। ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সহকারী তহশিলদার পদকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং তহশিলদারকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে নামান্তর করে পদবি পরিবর্তন করা হয়।তবে সেখানে বলে দেয়া হয় পদবি পরিবর্তন হলেও তারা উচ্চতর বেতন স্কেলে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। অবশ্য ২০১৩ সালের ৩০ মে সরকার আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করে এই দুই পদধারীদের বেতন স্কেল পুনঃনির্ধারণ করে। কিন্তু দু’মাস না যেতেই নানা রকম জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ওই বছর ২২ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বেতন স্কেল নির্ধারণ সংক্রান্ত আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।