করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহে মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ ব্যবহার হচ্ছে। - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহে মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ ব্যবহার হচ্ছে।


আলোকিত বার্তা:সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহে মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ ব্যবহার হচ্ছে।নমুনা সংগ্রহকারীদের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে এমন টিউব ও সিরিঞ্জ দেয়া হচ্ছে।টিউবের ২০১৮ সালের জানুয়ারি এবং সিরিঞ্জের ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মেয়াদ পার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেকের নমুনা এসব মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে।স্পর্শকাতর কাজে মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া উপাদান ব্যবহার কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞরা (ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্ট) বলেন, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ এবং ভ্যাকুয়াম টিউব নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ, পরিসঞ্চালন ও পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব পণ্যের মেয়াদ দেয়া হয়।

কারণ পণ্যগুলো জীবাণুমুক্ত করা থাকে এবং প্লাস্টিক পণ্যের মানের ব্যবহার উপযোগিতা নিশ্চিত করে। এসব সরঞ্জামের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে আর জীবাণুমুক্ত থাকে না। কাজেই প্লাস্টিক টিউবও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।এক্ষেত্রে পণ্যগুলো রক্ত গ্রহণ ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার হলে সেই নমুনা কোনোভাবেই মানসম্পন্ন থাকে না। আর মেয়াদোত্তীর্ণ সিরিঞ্জ মানবদেহে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি থেকে সুস্থ দেহেও বিভিন্ন ধরনের টক্সিসিটি (বিষক্রিয়া) ছড়িয়ে পড়তে পারে।তিনি বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার্থে এ ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।তারা বলেন, সাধারণত মুখবন্ধ এসব টিউবে নেগেটিভ প্রেসার দেয়া থাকে। কিন্তু মেয়াদ পার হওয়ায় এর ভেতরের নেগেটিভ প্রেসার পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় প্রেসারের কার্যকারিতা হারাতে পারে। এ অবস্থায় এ ধরনের টিউবে নমুনা সংগ্রহ করলে, তার গুণগতমান ঠিক না থাকাই স্বাভাবিক।

পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহে যারা কাজ করছেন তাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নমুনা পরীক্ষার ফল নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইডিসিআরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন,রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে যেসব টিউব সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলোর মেয়াদ ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল। ২ বছর আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।অন্যদিকে রোগী বা সন্দেহজনকদের শরীর থেকে রক্ত নিতে ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মেয়াদ ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল। অর্থাৎ রক্ত টানা এবং রাখার পাত্র দুটোই মেয়াদোত্তীর্ণ। তারা জানান,রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেয়ার জন্য এসব সিরিঞ্জ ব্যবহারের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপত্তি ঘটছে।শরীরে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে টান দিলে অধিকাংশ সময় সিরিঞ্জের পিস্টন উঠে আসছে। এ সময় সিরিঞ্জে বাতাস ঢুকছে। ফলে প্রয়োজনমতো রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন,যে কোনো পণ্যের মেয়াদ পার হওয়া মানে ওই পণ্যের গুণগত মান অবশিষ্ট নেই।যেহেতু এসব সিরিঞ্জ ও টিউব প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, অর্থাৎ পণ্যগুলোর উৎপাদনে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয়েছে। রক্তের নমুনা সংগ্রহে মেয়াদোত্তীর্ণ উপাদান ব্যবহার করলে অন্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট নমুনা থেকে সঠিক ফল না পাওয়ার শঙ্কা আছে। তাই এ ধরনের টিউব ও সিরিঞ্জ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আইইডিসিআর এর কিছু কর্মী ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়ে হাসপাতালে টিকিৎসাধীন। এছাড়া পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে নমুনা সংগ্রহের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ডা.সাজ্জাদ। টেলিফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফোরদৌসী বলেন,আইইডিসিআর এগুলো সংগ্রহ করেছে নাকি তাদের স্টোরে ছিল সেটি তার জানা নেই।তবে তার দফতর থেকে দেয়া হয়নি।এ ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন প্রাণরসায়নবিদ হিসেবে তিনি মনে করেন এগুলো ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তবে যেহেতু মেয়াদোত্তীর্ণ তাই ব্যবহার না করাই ভালো। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলেও জানান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সোয়াব টেস্ট সবচেয়ে ফলপ্রসূ। এক্ষেত্রে একটা লম্বা টিউবে তুলা জড়িয়ে রোগীর মুখ হাঁ করিয়ে গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
মূলত তুলায় রোগীর যে লালা লাগবে, সেটাকেই নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭০ ভাগ।এছাড়া নোজাল অ্যাসপিরেট অর্থাৎ রোগের উপসর্গ দেখে চিকিৎসক যদি রোগীকে করোনা টেস্ট করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন, সে ক্ষেত্রে তাকে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। ল্যাবরেটরিতে নাজাল অ্যাসপিরেট টেস্টের মাধ্যমেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।এ ক্ষেত্রে রোগীর নাকের মধ্যে স্যালাইন সলিউশন ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তারপর সেটা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। যে সব রোগী মারাত্মক সর্দিতে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ওই সর্দির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় স্পুটাম টেস্ট।ফুসফুসে কোনো রকম সংক্রমণ হলেই প্রচুর পরিমাণে মিউকাস নির্গত হতে থাকে। ফুসফুসের এ মিউকাসকই হল স্পুটাম। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুস থেকে যে মিউকাস নির্গত হয়, সেই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নামই স্পুটাম টেস্ট। এক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ ভাগ। কিন্তু রক্তের নমুনায় করোনা ধরা পড়ার হার অনেক কম।তারপরও আইইডিসিআর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়াছি; ডিজি মহোদয়ের আনুকুল্যে এবং অধ্যাপক ফ্লোরার সহযোগিতায় আইইডিসিআর হতে একজন মহিলা শুষ্ক নাসারন্ধ্র কিছু নিয়েছেন এবং রক্তও সংগ্রহ করেছেন। রক্ত নেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে কোনো সদুত্তর পাইনি।

Top