আমার প্রিয় দেশের সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে ? - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমার প্রিয় দেশের সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে ?


আলোকিত বার্তা:বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার বাড়ার সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও যে বাড়তে থাকবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে কোন সন্দেহ নেই।প্রশ্ন হলো সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে?এবং কোন পর্যায়ে এসে এই হার কমতে শুরু করবে?এ সম্পর্কিত একটি মডেল রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট – আইইডিসিআর-এর হাতে আছে।কিন্তু জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে সেই বিবেচনায় এই মডেলটি সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না।এ বিষয়ে ভাইরোলজিস্ট ড. নজরুল ইসলাম বলেন, এক দিক থেকে ঠিক কাজটিই করা হয়েছে।কারণ এই মুহূর্তে প্রজেকশন(পূর্বাভাস)করার মতো যথেষ্ট ডেটা (উপাত্ত) পাওয়া যাচ্ছে না।কারণ করোনাভাইরাস রোগীদের কাছ থেকে নমুনা-রস সংগ্রহের কাজে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে।তিনি বলেন,একদিন নমুনা সংগ্রহ করে আরেকদিন তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।সেই তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অন্য এক দিন।ফলে এর থেকে এখনই কোন সুনির্দিষ্ট মডেল তৈরি করা কঠিন।এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আসা অনেক উপাত্ত ‘সিস্টেম লস’-এর শিকার হচ্ছে।বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর হার নিয়ে গত ২৬শে মার্চে তৈরি জাতিসংঘের একটি ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল রিপোর্ট বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এতে পূর্বাভাস করা হয়, বাংলাদেশে জনঘনত্বের বিবেচনায় করোনাভাইরাসে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটতে পারে।

কিন্তু এই পূর্বাভাসে একটি শর্ত ছিল। আর সেটি হলো করোনাভাইরাসের বিস্তার, প্রশমন এবং অবদমনে সরকারের তরফে একেবারেই যদি কোন ধরনের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলেই শুধুমাত্র এই পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে রোগতত্ত্ববিদ ড. এ. এম. জাকির হোসেন বলেন, এই ধরনের পূর্বাভাসের কিছু সমস্যা রয়েছে। সংক্রমণ বিস্তারের কিছু শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো: রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি, সংক্রমণের হার, আরোগ্যের হার, মৃত্যুর হার এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন এমন জনসংখ্যা।তিনি বলেন, চীনের এক হিসেব মতে, করোনাভাইরাসে যারা মারা যাবেন তাদের মধ্যে ৭১% থেকে ৭৯% মারা যাবেন অন্য কোন রোগে, যাকে ‘কো-মরবিডিটি’ বলা হয়। যেমন, হার্টের সমস্যা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চীনা হিসেবটিকে ব্যবহার করে আমরা ধরে নিতে পারি করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে, এমন ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার মানুষ কোমরবিডিটিতে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।ড. হোসেন বলেন, এটা দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে মৃত্যুহার হচ্ছে প্রতি ১০০০ জনে পাঁচ জন। অর্থাৎ প্রতিবছর নানা কারণে নয় লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে।বাংলাদেশে সংক্রমণের বিস্তার এক্সপোনেনশিয়াল হচ্ছে কিনা তার চিত্রটি এখনও পরিষ্কার না। প্রথম দিকের বৃদ্ধি এক্সপোনেনশিয়াল বলে মনে হলেও কয়েকদিন দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।তবে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষক ড. মলয় মৃধা ও রিনা রানী পাল , নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দীপক কে. মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক দু’জন গবেষক মিলে যে রিপোর্টটি তৈরি করেন তাতে বলা হয় ১৩ কোটি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

জাতিসংঘের নথির মতোই এই রিপোর্টে ধরে নেয়া হয়, এই হারে সংক্রমণ ঘটবে যদি এই ভাইরাস মোকাবেলায় ২৮শে মে’র মধ্যে একেবারেই কোন উদ্যোগ নেয়া না হয়। তবে এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে এটি তাদের কোন গবেষণা নয়।

সারা দেশ ঝুঁকিপূর্ণ:
বাংলাদেশে সংক্রমণ বিস্তারের এই পটভূমিতে সরকার গত ১৬ই এপ্রিল সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। সংক্রমণ রোধে একমাত্র কার্যকর পন্থা: জনসাধারণের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা ও সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু নতুন বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।এতে জরুরি কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া এবং সন্ধ্যা ছটা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সংক্রমণের হার যে বাড়ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নানা ধরনের পদক্ষেপ দিয়ে এই সংখ্যাকে কীভাবে নামিয়ে আনা যায় তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের এখন চরম পরীক্ষা চলছে।তিনি বলেন, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে আরো অনেক বেশি কমিউনিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় সরকারের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এখনো বেশ কার্যকর। কিন্তু শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা মূলত বেসরকারি খাতে। ফলে সেখানে জরুরি ভিত্তিকে তৎপরতা বাড়াতে হবে।ড. হোসেন আরো বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি সম্পর্কে গাণিতিক পূর্বাভাসের সুযোগ এখনো বেশ সীমিত। কারণ এবিষয়ে আমাদের নেই কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা। আর একেক দেশে এই ভাইরাস একেকভাবে ছড়াচ্ছে। ফলে এক দেশের মডেল অন্য দেশে প্রয়োগ করা কঠিন। সূত্র: বিবিসি।

Top