৫টি সংশোধনীর প্রস্তাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঋণ ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বা পানির বিলখেলাপিদের
আলোকিত বার্তা:জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঋণ ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বা পানির বিলখেলাপিদের বিশেষ ছাড়সহ ৫টি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত এসব বিল জমা দেয়ার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও)’র সংশোধনীর প্রস্তাবে এসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রতি সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর পরিবর্তে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০২০’ শিরোনাম দেয়ারও প্রস্তাব করেছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।সংশোধনী প্রস্তাবে আরও রয়েছে- প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন ও প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ। পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতির রেকর্ড রাখতে নতুন উপধারা যুক্ত করা। নির্ধারিত সময়ে ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর জরিমানা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মূলত আমরা এটিকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করেছি। এছাড়া কয়েকটি ছোটখাটো সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছিইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে আরপিওর অনেকগুলো ধারা-উপধারায় সংশোধনের প্রস্তাব এসেছিল। ওইসব প্রস্তাব সমন্বয় করা সম্ভব নয় বলে মনে করছে কমিশন। তাই এবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ ছাড়াই অনেকটা গোপনে ছোটখাটো কিছু সংশোধনীসহ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, আরপিও সংশোধন করে আইনে রূপান্তর করার প্রস্তাবে ইসি কিছু যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, সদ্য স্বাধীন একটি দেশের সংসদ নির্বাচন ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়াবলি যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সিডিউলের ৩ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে Representation of the People Order, 1972 (P.O. No.155 of 1972) জারি করেন। ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত ৪৭ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতাকে আইনানুগ রূপ দেয়ার লক্ষ্যে আদেশটিতে বহুবার সংশোধন করা হয়েছে।এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সাহায্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন নির্বাচনী পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াকে আদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখার লক্ষ্যে কখনও কোনো অনুচ্ছেদের আমূল পরিবর্তন, কখনও নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজনের প্রক্রিয়ায় আগের আদেশটির মৌলিকত্ব অনেকখানি বিনষ্ট হয়েছে।পাশাপাশি বিভিন্ন অনুচ্ছেদের সঙ্গে কিছুটা অসামঞ্জস্যতাও সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে সম্বোধন করার জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। এছাড়া বাংলা ভাষায় এটিকে রূপান্তর করাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।এবার বিলখেলাপিরা পাচ্ছে বিশেষ সুযোগ : আরপিও সংশোধনীতে ঋণ ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বা পানির বকেয়া বিলখেলাপিদের বিশেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধারা ১৩(ট) ও (ড) এসব সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ধারা ১৩(ট)-এ ঋণখেলাপিরা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তা পরিশোধ করলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হওয়ার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে কৃষিকাজে নেয়া ক্ষুদ্র ঋণের আওতাভুক্ত হবে না। আর ১৩(ড) ধারায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বা পানির বকেয়া বিলখেলাপিরাও মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তা পরিশোধ করলে বৈধ হিসেবে গণ্য হবেন। নাম গোপন রাখার শর্তে ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান আরপিওর ১২(১) ধারায় যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।এতে মনোনয়নপত্র দাখিলের ৭ দিন আগে খেলাপি ঋণ ও বিল জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। অন্যথায় তারা নির্বাচনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১২(১)(এম) ধারা সংশোধন করে কোম্পানির পরিচালক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অংশীদারদের এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এবার বাকিদেরও একই সুযোগ দেয়া হল।এজেন্টদের রেকর্ড রাখতে নতুন উপধারা : আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবে নির্বাচনে ভোটকক্ষে প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতি রেকর্ড করার জন্য নতুন একটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। ধারাটি হচ্ছে ২৪(৪)। এতে বলা হয়েছে, সহকারী ভোটকেন্দ্র অধিকর্তা নির্ধারিত ফরমে ভোটকক্ষ প্রতিনিধিদের হাজিরা লিপিবদ্ধ (রেকর্ড) করিয়া সংরক্ষণ করবেন।জামানত ও জরিমানা বাড়ছে : আরপিও সংশোধনীতে প্রার্থীদের জামানত ও রাজনৈতিক দলের ব্যয় দাখিলে ব্যর্থ হলে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের ১৪(১)(ক) ধারায় জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
অপরদিকে ধারা ৫৪(৪) ধারায় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যয় বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে জরিমানার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দুই ক্ষেত্রেই টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত উল্লেখ করেছে কমিশন।নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণে কমিটি গঠন : প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয় মনিটরিংয়ের জন্য প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কমিটি প্রার্থীদের ব্যয় পরিবীক্ষণ করতে পারবেন।এজন্য আইনের ৫৩(৮) ধারা সংযুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণ করার উদ্দেশ্যে কমিশন প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার জন্য এক বা একাধিক নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করবেন। কমিটি কমিশন কর্তৃক সময় সময় জারিকৃত নির্দেশনা অনুসারে কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণ করতে পারবে।