বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেয়ার তোড়জোড় আবারও শুরু হয়েছে। - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেয়ার তোড়জোড় আবারও শুরু হয়েছে।


আলোকিত বার্তা:বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেয়ার তোড়জোড় আবারও শুরু হয়েছে। এজন্য সংশোধিত খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা অনুমোদনের জন্য কয়েকদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।এতে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে হবে মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই পরিপূর্ণ। কোনো স্টাডি বা রিজিওনাল সেন্টার খোলা যাবে না। মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রো-ভিসি বা ভাইস প্রেসিডেন্টের অধীনে পরিচালিত হবে এ ক্যাম্পাস।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলসহ প্রয়োজনীয় পর্ষদ থাকতে হবে। নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা থাকবেন।জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বুধবার বলেন,বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচালনা সংক্রান্ত একটি বিধিমালার খসড়া ইউজিসি থেকে আমরা পেয়েছি। এটি মূলত ২০১৪ সালে তৈরি করা বিধিমালার সংশোধিত রূপ। এখন এই বিধিমালার ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (আইনি মতামত) নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে তা জারির ব্যবস্থা করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে এখন পর্যন্ত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এরপরও ‘স্টাডি সেন্টার’ নামে কয়েকটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এ ক্যাম্পাস মানে ২-৪টি রুম ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টারের মতো পরিচালিত উচ্চশিক্ষা। এগুলো চলছে প্রায় শতভাগ ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে। ফলে একাডেমিক এবং ক্যাম্পাসের তেমন একটা পরিবেশ নেই।অনেকেই তাই এগুলোকে বলে আসছেন ‘ব্রিফকেস ইউনিভার্সিটি’, কেউ কেউ এগুলোকে তুলনা করেছেন ‘হায় হায় কোম্পানি’র সঙ্গে। তাই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অনুমোদনের প্রশ্ন উঠলেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বলতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ, পাঠ্যক্রম কমিটি, অর্থ কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ ও শৃঙ্খলা কমিটি থাকতে হবে।

বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাসে প্রধান থাকবেন একজন প্রোভিসি বা ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়া ট্রেজারার, ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা, পরিচালক (অর্থ), জনসংযোগ কর্মকর্তা ও লাইব্রেরিয়ান থাকবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।শাখা ক্যাম্পাস সমাবর্তন আয়োজন করবে, তাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্রেসিডেন্টকে উপস্থিত থাকতে হবে। সনদপত্রে সংশ্লিষ্ট বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/প্র্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করবেন।কোনো শাখা ক্যাম্পাস বিধিমালা না মানলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে। এছাড়া কোনো শাখা ক্যাম্পাসের সনদ বাতিল হলে, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে শাখা ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অখ্যাত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বাংলাদেশে পরিচালনার সুযোগ রাখা হবে না বিধিমালায়। এ কারণে শাখা ক্যাম্পাস হিসেবে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে অনুমোদন দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে। এক্ষেত্রে স্বীকৃত র‌্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনা করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, দেশে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলায় জেলায় আরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তা আছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেয়া কতটা সমীচীন হবে-সে চিন্তাও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কেউ কেউ করছেন। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরাও চাচ্ছেন না বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হোক।২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের একটি ধারার নির্দেশনার আলোকে ২০১৪ সালে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বিধিমালার আলোকে ১৪টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আবেদনও করে। তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের আপত্তির কারণে ওই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি।সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের ওই বিধিমালায় শিক্ষার্থী সুরক্ষার দিকটি যথাযথভাবে স্থান পায়নি। যে কোনো অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগও আছে তাতে। এছাড়া ওই বিধিমালায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধিত বিধিমালায় স্টাডি সেন্টার বাদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী শুধু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি পাবে।এ প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.কাজী শহীদুল্লাহ বলেন,উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য। সেই বিষয়টি সামনে রেখে বিধিমালার খসড়া সংশোধন করা হয়েছে।

Top