সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া কোনো কিছু শেয়ার বা পোস্ট না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান
আলোকিত বার্তা:ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু শেয়ার বা পোস্ট না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি আমাদের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যারও সৃষ্টি করছে। দেখা যায় মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা অ্যাপস ব্যবহার করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের অনেক অপ্রয়োজনীয় লিঙ্ক চলে আসেতাই ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট যথাযথভাবে ফিল্টার করার ব্যবস্থা করতে হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৩য় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে আমি বলব একটা কিছু এলো (ইন্টারনেটে আপলোড হলো) অমনি সেটা শুনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা বা অন্য কিছু করা ঠিক নয়। সঠিক তথ্য যাচাই করে নেয়া দরকার।
তিনি বলেন, যাচাই না করে শুধু গুজবে কান দেয়া বা শুধু নিজের কৌতূহলবশত সেগুলোতে প্রবেশ না করাই ভালো। কোনো ধরনের মন্তব্য দেয়া বা ছড়ানো বা সেটাতে হাত দেয়াই উচিত নয়।তিনি বলেন, কোনো পোস্ট শেয়ার করতে গেলে আগে তার খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে এটা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা। কোনো পোস্ট শেয়ার করা বা ইন্টারনেটে কোনো অ্যাপস দেখলেই সেটা যাচাই না করে সেগুলোতে প্রবেশ না করাটাই ভালো।এই অভ্যাস গড়ে তুললে সেটা আমাদের সমাজের জন্য, দেশের জন্য এবং প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০১৯’ সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি ‘আমার সরকার’ শীর্ষক একটি অ্যাপও অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন।আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একেএম রহমতউল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এএনএম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
সরকারের আইসিটি সেক্টরের অগ্রগতি তুলে ধরে একটি ভিডিও চিত্রসহ গত ১২ ডিসেম্বর সারা দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদযাপনের তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক,উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, আইএসপি ও টেলিকমিউনিকেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।আইসিটিভিত্তিক সেবা সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করা ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর সারা দেশে ৩য় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপিত হয়। যার এবারের প্রতিপাদ্য ছিল-‘সত্য মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ছোট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ সমাজকে সাইবার ক্রাইম বা সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করা একান্তভাবে দরকার। মানুষ যেন এ ব্যাপারে আরও সজাগ হন সেজন্য অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাইকেই আমি সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।কারণ এতে করে ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় বিপথে চলে যায়। অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, অনেক ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা যুক্ত হয়ে পড়ে। এটা যেন না হতে পারে সেজন্য সবাইকেই সচেতন হতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু তারা কী দেখছে, কোথায় যাচ্ছে- তার ওপর নজরদারি অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ আসলে এটা একটা আসক্তির মতো হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,দীর্ঘ সময় ইন্টারনেটে বা মোবাইল আইপড ও কম্পিউটারে যুক্ত থাকলে মনের ওপর একটা চাপ আসে।এতে শরীরের ওপর চাপ আসে।চোখের ক্ষতি হয়,ব্রেনের ক্ষতি হয়।কাজেই এই বিষয়গুলোর ওপরে সচেতনতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২০ ভাগে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং এটাকে আরও কমাতে চাই।প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত করেছি, মূল্যস্ফীতি ৫ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান’ ঘোষণা করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিল। আমরা জনগণকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দিয়েছি।
আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এখন অন্য দেশ অনুসরণ করছে।তার সরকার প্রায় ১১ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ-কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনকে ঘিরে নেয়া অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় জনগণ এখন ঘরে বসে ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে সারা দেশে ৫ হাজার ৮শ’ ৬৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। শুধু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ১০ বছরে মানুষকে ৪৬ কোটি সেবা দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, দেশে এখন মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার। বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর মনোপলি ব্যবসা ভেঙে সরকার মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেয়াতেই এটা সম্ভব হয়েছে।পাশাপাশি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রচারভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ সহজ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,৩ হাজার ৬শ’টি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় এনেছি, এ বছর আরও ২০০ ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি দেয়া হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দুর্গম এলাকার বাকি ৭৭২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেব। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি।সরকারপ্রধান বলেন, ই-টেন্ডার ও ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করেছি। এক জায়গায় সব সমস্যার সমাধান- এই লক্ষ্য নিয়ে ‘একসেবা’, ‘এক-পে’ ও ‘একশপ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। একইসঙ্গে জনগণ ‘৯৯৯’, ‘৩৩৩’ ও ‘১০৯’ নম্বরে কল করে বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে।তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছি। তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা মেটাতে জেলা পর্যায়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ শুরু করেছে। ভবিষ্যতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গেও দেশকে যুক্ত করা হবে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশের তথ্য চুরি হয়ে যাবে বলে অজুহাত টেনে দেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে দেয়নি, দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।
তিনি সে সময় নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানির কাছ থেকে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করে বাকিটা অনুদানে দেশের জন্য ১০ হাজার কম্পিউটার সংগ্রহের প্রকল্প চূড়ান্ত হওয়ার পরেই সরকারের দায়িত্বে আসতে না পারায় এবং বিএনপি সে প্রকল্প বাতিল করে দেয়ার ফলে দেশের লোকসান ঘটানোর ঘটনা স্মরণ করে এর কঠোর সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, এ জন্য পরিশোধকৃত অর্থ গচ্চাসহ দেশের অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকার জরিমানা গুনতে হয়েছিল। কারণ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল টিউলিপ নামে সেই ডাচ কোম্পানির নাম থাকায় বিএনপির লোকেরা খালেদা জিয়াকে বোঝায় যে-‘এটি শেখ রেহানার মেয়ে’র কোম্পানি (বর্তমানে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী)।২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগসহ আগামী প্রজন্মের জন্য শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে আইসিটির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।