অবলোপনকৃত ও খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে‘বিশেষ উদ্যোগ’নিতে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আলোকিত বার্তা:অবলোপনকৃত ও খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে‘বিশেষ উদ্যোগ’নিতে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিচারাধীন মামলা ও অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে এসব নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.আসাদুল ইসলাম বলেন,বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবলোপনকৃত ও খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে,সম্প্রতি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।এতে খেলাপি ঋণের অবস্থা,অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ,অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা মামলার সর্বশেষ অবস্থা ও অনিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।এ সময় সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর শ্রেণি ও অশ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ হাজার ১০৬ কোটি টাকা।এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা,রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের (রাকাব) ২১শ’ কোটি টাকা,কর্মসংস্থান ব্যাংকের হচ্ছে ৯১০ কোটি টাকা ও আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৬৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া বিএইচবিএফসির শ্রেণিকৃত ও অশ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হল ৫৬৯ কোটি টাকা,প্রবাসী ব্যাংকের ৮৩ কোটি টাকা,আইসিবি’র ১০৩০ কোটি টাকা ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ২ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা।এসব ঋণের মধ্যে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১১ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে বিকেবি, ১৯ শতাংশ রাকাব, ৩৬ শতাংশ কর্মসংস্থান ব্যাংক ও ২৭ শতাংশ আদায় করেছে আনসার ভিডিপি ব্যাংক।এছাড়া বিএইচবিএফসির শ্রেণিকৃত ও অশ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে আদায় করেছে ২০ শতাংশ, প্রবাসী ব্যাংকের ২৬ শতাংশ, আইসিবি’র ২৩ শতাংশ ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আদায় ৪৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।এর মধ্যে বিকেবি ঋণ অবলোপন করেছে ২১২ কোটি টাকা, রাকাব ১৫৩ কোটি টাকা, কর্সসংস্থান ব্যাংক ১৪ কোটি টাকা, আনসার-ভিডিপি ব্যাংক ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ও আইসিবি অবলোপন করে ২৬৩ কোটি টাকা।খেলাপি ঋণ ও অবলোপন ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ ঋণ বিতরণ কমে গেছে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। সর্বশেষ তথ্য মতে, এ বছর ১৩ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এর মধ্যে আইসিবির ১২১৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ঋণ দিয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। গত বছর একই সময় বিতরণ করেছিল ৩০৩ কোটি টাকা।
এছাড়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১০০০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে বিতরণ করেছে ৩৫৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর এ সময়ের মধ্যে ৭৯২ কোটি টাকার ঋণ ইস্যু হয়েছিল।বিকেবি পুরো বছরে ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রথম তিন মাসে ঋণ দিয়েছে ১২২০ কোটি টাকা।অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রবাসী ব্যাংক ৩৪ শতাংশ, বিএইচবিএফসি ব্যাংক ২৬ শতাংশ, রাকাব ১৭ শতাংশ, কর্মসংস্থান ব্যাংক ৩২ শতাংশ ও আনসার ভিডিপি ঋণ বিতরণ করেছে ২০ শতাংশ।
ওই বৈঠকে এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঋণ বিতরণের হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে এমডিদের।বৈঠকে বিশেষায়িত ব্যাংকের অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে।বিশেষ করে অডিট আপত্তির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়।সূত্র মতে, বিকেবিতে বাণিজ্যিক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৬ হাজার ৫২৭টি, রাকাবের ৩ হাজার ৯৭৯টি, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৪৩৭টি, আনসার-ভিডিপির ২৮৪টি, বিএইচবিএফসির ২৪৪টি ও আইসিবির ১০৫টি। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর।
এর মধ্যে বিকেবিতে অনিষ্পত্তি অডিট আপত্তি হচ্ছে ২০ হাজার ৬৬০টি,রাকাবের ৫ হাজার ৩২টি,কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৪৮৪টি,আনসার-ভিডিপির ৫ হাজার ৭৩টি,বিএইচবিএফসি ৫৮টি, প্রবাসী ব্যাংকের ৩৩০টি ও আইসিবির ১১১টি।অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন,সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে ঋণ বিতরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম বেড়ে গেছে।যে কারণে বেড়েছে অডিট আপত্তির সংখ্যাও।এরপরও বিভিন্নভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এভাবে অডিট আপত্তি কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।