বিআরটিএ দপ্তরে।আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিআরটিএ দপ্তরে।আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র।


আবুবকর সিদ্দীক:নতুন সড়ক আইনের কঠোর শাস্তি ও জরিমানা থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন ধরণের গাড়ির মালিক ও চালকরা নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবা নিতে হন্নে হয়ে ধরন্না দিচ্ছেন বরিশালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের(বিআরটিএ)দপ্তরে।আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র।দূরদূরান্ত থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে।ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া, লাইসেন্স নবায়ন,গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন,ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়াসহ নানা সেবায় দালালদের সঙ্গে কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।জানা গেছে,নুরু,আনসার ফারুক,জলিল ওরফে কাউয়া জলিল ও জাকির বিআরটিএ তে গড়ে তুলেছেন বড় একটি সিন্ডিকেট।দপ্তরটিতে সীমিত জনবল ও অসাধু কর্তাব্যক্তিদের সুবাধে দালালরা কায়েম করেছে ছায়া বিআরটিএ।যে কারণে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা সেবা গ্রহীতারা।দালালদের লেখনির ফরম পেলেই সহসাই আবেদন জমা নেয়া হয় অন্যথায় ব্যস্ততা ও দুর্ব্যবহারে করে সরিয়ে দেয়া হয় আবেদনকারীকে

একাধিক ভুক্তভুগীসুত্র জানায়,সরকারি ফি’র বাইরে হাতিয়ে নেয়া হয় ৪/৫ হাজার টাকা। অন্যথায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ও শিক্ষানবিস চালক লাইসেন্সসহ নানাবিধ কাজ করতে গেলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। সুত্রে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৫১৮টাকা। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০ টাকা জরিমানাসহআর পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০ টাকা জরিমানাসহ। লাইসেন্স হারিয়ে গেলে তা পুনরায় কপি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি ৮শ ৭৫ টাকা। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি (পেশাদার ১৬৭৯টাকা ও অপেশাদার ২৫৪২টাকা)। অপরদিকে গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন পেতেও দালালদের ৫/৬হাজার টাকা দিতে হয়।
এনিয়ে দালাল জাকির জানায়, আমরা যে টাকাটা নেই তা খেটেখুটে নেই। সত্যায়ন ফরম পুরণ ব্যাংকে টাকা জমাসহ অন্যান্য কাজ করি। কিন্তু অফিসকে তো প্রতিটি ফরমের জন্য ২/৩ হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা মাত্র ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পাই।এদিকে বিআরটিএ দপ্তরে দালালদের দৌরাত্ম ঠেকাতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নগরীর দুদক দপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করেছিল কিন্তু এরপর ফের মাথাচারা দিয়েছে দালালদের নেটওয়ার্ক।

এব্যাপারে বরিশাল দুদকের উপপরিচালক দেবব্রত মন্ডল বলেন, নিয়মিতই অভিযান পরিচালিত হবে দুর্ণীতিগ্রস্থ দপ্তরগুলোতে। এছাড়া আমাদের কাছে অভিযোগ করারও যথেষ্ট মাধ্যম রয়েছে। যে কেউ ১০৬ কল করে অভিযোগ জানাতে পারে।বরিশাল বিআরটিএ দপ্তরে দালাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার ব্যাপারে সহকারি পরিচালক মো: আতিক বলেন, দালাল কে আমরাতো চিনিনা তবে পরিচিত অনেকেই আসে সুবিধা নেয়ার জন্য এবং সেক্ষেত্রেও আমরা সিস্টেম ভঙ্গ করিনা। এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের জনবল সংকটও রয়েছে যেকারণে যথাযথ নিয়ম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যেমন ২০টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ১২ জন এবং শুন্যপদ রয়েছে ৮জন। পাশাপাশি অফিস কক্ষও অপর্যাপ্ত। আমাদের মুল ভবনের জায়গা নির্ধারিত হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের জন্য। তখন অবশ্য এধরণের সমস্যা থাকবেনা কারণ তখন পরিবেশটাই থাকবে অনেকটা গোছানো এবং মানুষও বাধ্য হবে উক্ত পরিবেশে সারা দিতে। আর তখন গাড়ি যাচাই-বাছাই হবে ডিজিটাল ল্যাবে যেকারণে সময়ও বেঁচে যাবে অনেক।সুত্রে আরো জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪শ আবেদন জমা হয় এবং এরমধ্যে বেশিরভাগই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার। আর বরিশালে মোট নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে ৪৭ হাজার ৯’শ ৫২টি এবং ৩৬ হাজার ৩শ ৮৪টি চালকের লাইসেন্স রয়েছে।

অপরদিকে শিক্ষানবিস চালক লাইসেন্স আবেদনকারী সাব্বির হোসেন বলেন, অফিসে ঢুকতেও সিরিয়ালে থাকা লাগে ১০/১৫ মিনিট। এরপর ঢুকতে পারলেও কোন টেবিলে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো তারও উপায় থাকেনা। কারণ প্রতিটি টেবিলের সামনে আমার মতো অন্তত ৮/১০ জন দাড়িয়ে অপেক্ষমান আছে সেবা নেয়ার জন্য। এরমধ্যে অনেকেই আছে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যারা প্রত্যেকে কয়েকমাস আগে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অপেক্ষায় রয়েছে।কিন্তু দিন পার হলেও পাচ্ছেনা গ্রাহক তার রেজিস্ট্রেশন কিংবা চালক লাইসেন্স।কিন্তু দপ্তরের কাছে এনিয়ে ধরনা দিলে তারা জানায়, মোবাইলে ম্যাসেজ পাবেন অথচ মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও মোবাইলে ম্যাসেজ আসেনা।এনিয়ে অপর এক ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসনে জানায়,আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে বিআরটিতে গেলে লার্নার করতে বলে।এরপর লার্নার(শিক্ষানবিস)লাইসেন্স করি।বর্তমানে যা মেয়াদোর্ত্তীন।কিন্তু আমার এক প্রতিবেশী লাইসেন্স করাতে গিয়ে দালালের সরান্নপন্ন হন সে লার্নার ছাড়াই হালকা মটরযান লাইসেন্স প্রাপ্ত হন।আর এধরণের চালচিত্র অহরহ বিআরটিএ দপ্তরটিতে। শুধু তাই নয়,দালালরা কর্তব্যরতদের সাথে দেনদরবারে লিপ্ত হয় বেশ প্রকাশ্যেই।

Top