দলে অনুপ্রবেশকারী নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দলে অনুপ্রবেশকারী নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।


মাইদুল ইসলাস:দলে অনুপ্রবেশকারী নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।আসন্ন উপজেলা সম্মেলনে বিতর্কিত এই নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা।দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে স্বপনকে বাদ দিয়ে প্রকৃত আওয়ামী পরিবারের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার দাবি তৃনমুলের। যা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান,বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন ১৯৮৮-৮৯ সালে ছিলেন কামরুল গ্রুপের ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র মঞ্চের নেতা।১৯৯০ সালে কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা খলিলুর রহমান শরিফের তত্ত্বাবধানে গোলাম কিবরিয়া টিপুর সাথে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। পরবর্তী ১৯৯১ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজের ব্যানারে শের-ই-বাংলা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্রীড়া সম্পাদক পদে অংশগ্রহন করেন। ১৯৯২ সালে কামরুল গ্রুপের নেতা খলিলুর রহমান শরিফ জিয়া গ্রুপের নেতা মাইন উদ্দিন সিকদারের কাছে ইউপি নির্বাচনে হেরে যায়। সেই সাথে খালেদ হোসেন স্বপনও দল পরিবর্তন করে মাইন উদ্দিনের হাত ধরে জিয়া গ্রুপে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে মাইন উদ্দিনের পক্ষ ছেড়ে নেতা নান্না’র হাত ধরে ঢাকার সুগন্ধায় তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন খালেদ হোসেন স্বপন। এর পর ১৯৯৪ সালে আগরপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র দুই ভোটে হেরা যান।

এছাড়া ১৯৯৭ সালে বিএনপি নেতা নান্না’র আশির্বাদে ইউপি নির্বাচন করেন খালেদ হোসেন স্বপন।যে নির্বাচনে স্বপনসহ ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচনে ভোটের ব্যবধানে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন তিনি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর পরই বিএনপি নেতা নান্না’র পক্ষ ত্যাগ করে নেতা খলিল শরীফ গ্রুপে নাম লেখান।১৯৯৭ সালের ১৭ জুন খালেদ হোসেন স্বপন নেতা খলিল শরিফকে মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যাবার পথে পথিমধ্যে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন খলিল। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় আসামী করা হয় স্বপনকেও। অভিযোগ রয়েছে খলিল শরিফ হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনায় নেতা নান্না মিয়া ও খালেদ হোসেন স্বপনের সম্পৃক্ততা ছিল।

এদিকে ছেড়ে আওয়ামী লীগের উপর ভর করে নানা বিতর্কের খলনায়ক সরদার খালেদ হোসেন স্বপন। ২০০০ মালে মিলন মৃধার হাত ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘরে স্বপনের। এমনকি ২০০২ সালের নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলালের অনুগত হিসেবেই ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে আগরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। যিনি ১৯৯৭-২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে হেরে যান ২০০২ সালে অন্য সরকারের আমলে তিনি কিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। স্থানীয়দের দাবি বিএনপি-জামায়াতের কাদে ভর করেই ওই সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন খালেদ হোসেন স্বপন।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় জামায়াত পন্থি নেতাকে নিয়ে পরিষদ গঠন করেছিলেন স্বপন।তৎকালিন সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অলিদকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।তিনি যে কেন্দ্রে ভোট কারচুপি করেছেন সেই কেন্দ্রে ওই জামায়াত নেতাও একই ভোট পান।যার সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে থলের বেড়াল।

অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,নেতা সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বাবা আবুল কাশেম সরদার একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন।৭১’র মুক্তিযুদ্ধকালিন সময় গৌরনদীর সরিকলের আলাউদ্দিনের বাড়িসহ বিভিন্ন হিন্দু পরিবারের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে জালিয়ে দেয় পাক বাহিনী।সে সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন রাজাকার কাশেম সরদার।কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় সেই রাজাকার কাশেমকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করনের আবেদন ঢাকায় প্রেরণ করেন রাজাকারপুত্র খালেদ হোসেন স্বপন।তার এই আবেদনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর পাল্টা অভিযোগ দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।যে আবেদনে আলহা্বি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি,সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা ওয়াদুদ সরদার-বীর বিক্রিম, মুক্তিযোদ্ধা রত্তন আলী শরীফ-বীর বিক্রম,মুক্তিযোদ্ধা নুরু কমান্ডার,মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো.ইসমাইল হাওলাদারকে।

খালেদ হোসেন স্বপনের বড় ভাই ফারুক সরদার।সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ারউর রহমানের গঠিত ইউথ কমপ্লেক্স এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।পরবর্তীতে ফ্রিডম পার্টির নেতা হন ফারুক। তৎকালিন সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই নির্যাতনের শিকার হন স্বপনের ভাই ফারুক কর্তৃক।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন,সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ছত্রছায়ার ৬টি ইউনিয়নে মাদক ব্যবসা চলছে।আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অনের জমি দখল করে ইটভাটা নির্মান,নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন,নদী দখল করে মাছের ঘের নির্মান,টিআর, কাবিখা এবং নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি স্বপনের হাত থেকে রক্ষা পাননি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল।যাকে প্রকাশ্যেই শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন খালেদ হোসেন স্বপন। এছাড়া বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে আসা এক আওয়ামী লীগ কর্মীর উপর হামলা হয় স্বপনের নির্দেশে। যিনি দীর্ঘ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন। তাছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং দলীয় পদ ব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন সরদার খালেদ হোসেন স্বপন। বরিশালের লুৎফর রহমান সড়কে ফ্লাট, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বাটারা এবং রাইডার্স বিল্ডার্সে কয়েকটি ফ্লাট, ৩টি ইটের ভাটার মালিক হয়েছেন তিনি।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন,বিতর্কিত নেতা সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির মামলা।এছাড়া সংখালঘু সুজন হত্যা ও রাশেদুল এবং খসরু নামক ব্যক্তির চক্ষু উৎপাটন মামলার আসামিও ছিলেন খালেদ হোসেন স্বপন। দুর্নীতি বাদে অন্য সকল মামলাই এবং বিএনপি’র রাজনীতিতে জড়িত থাকাবস্থায় হয়েছে।আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলেন,সরদার খালেদ হোসেন স্বপন দীর্ঘ বছর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশিল পদ ব্যবহার করলেও দলীয় নেতা-কর্মীরা তার কাছ থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাননি। নিজে অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় বিএনপি-জামায়াত ঘরানার লোকের সুযোগ সুবিধা দেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে করেছেন লাখ লাখ টাকার মনোনয়ন বানিজ্য। মুক্তিযোদ্ধা বাছাইতেও উৎকোচ বানিজ্য এবং উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে দপ্তরি নিয়োগে লাখ লাখ টাকা বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে স্বপনের বিরুদ্ধে।

সূত্র আরও জানায়, সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের অন্যতম সহযোগী কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম। যিনি ডাকাত দলের নেতা ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। গরু চুরি, বালু চুরিসহ এমন কোন অভিযোগ নেই যার সাথে সম্পৃক্ত নেই নূরে আলম। সর্বশেষ নারায়নগঞ্জে একটি স্কেবেটর (বেকু) চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণধোলাই’র শিকার হন। আর এসব কিছুর পেছনে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপনের যোগসূত্রে রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বর্তমানে স্বপনের বালু এবং ইটের ব্যবসার পার্টনার নূরে আলম।এছাড়াও চাঁদপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল। যিনি ছিলেন সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালক। এজন্য তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। রহমতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সহিদ মল্লিক। যার মাধ্যমে এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে থাকেন এক সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরদার খালেদ হোসেন স্বপন। সম্প্রতি গঠন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ম্যাগগাইবার মনির স্বপনের মাদক ব্যবসার দেখভাল করেন। এক কারনেই স্বপনের শুপারীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগে পদ পান তারা। এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মাত্র মাস খানেক পূর্বে ইটের ভাটায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেন স্বপনের অন্যতম সহচর কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম। তাছাড়া ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে কামাল।এদিকে স্বপনের একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ফুসে ওঠা উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এর বিষ্ফোরন ঘটে গেলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে দলের হাই কমান্ডে ইমেজ সংকটে থাকা সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধাচার করেন নেতা-কর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। যার ফলশ্রæতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের মনোনয়ন হারান স্বপন। এতো কিছুর পরেও তার টার্গেট এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ। আর এ পদটি বাগিয়ে নিতেই উপজেলার কোন ইউনিয়নেই সম্মেলন করতে দেয়নি স্বপন। কেননা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপধারী অধিকাংশ নেতাই স্বপনের অনুগত্য বলে জানাগেছে। ইউনিয়নে নতুন করে সম্মেলন হলে বিতর্কিতদের বাদ পড়া এবং উপজেলা সম্মেলনে স্বপনের পরাজয় নিশ্চিত যেনেই ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড সম্মেলনও করতে দেননি স্বপন। এসব কারনে স্বপনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে গোটা উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা নির্বাচনের মতো করেই উপজেলা আওয়ামী লীগেরর অস্থিত্ব রক্ষায় তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা।

Top