আমরণ অনশনে যাওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন শ্রমিকরা - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরণ অনশনে যাওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন শ্রমিকরা


পাখি আক্তার:বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সার উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ না করলে আগামী ২ অক্টোবর বুধবার থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন শ্রমিকরারোববার(২৯ সেপ্টেম্বর)দুপুরে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডস্থ সংগঠন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ বরিশাল মহানগর রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক সুশান্ত সুকুল।লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,গত ১৯ শে আগস্ট থেকে কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বরিশাল শহরে দফায় দফায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা উচ্ছেদের নামে নির্মম প্রশাসনিক অভিযান চলছে। প্রায় দুই মাসব্যাপী এই অভিযানে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিক্সা আটক করা হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি গাড়ির ব্যাটারি-মটর খুলে রাখা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দরিদ্র রিক্সাচালকরা শিকার হয়েছে নানাবিধ আর্থিক হয়রানি ও নির্যাতনের।গত ৮ বছর ধরে বরিশালে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারীচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতি আদায়ের জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। আন্দোলনের একপর্যায়ে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম মেনে এই ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচলের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এই প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে গত ১ বছর ধরে যানজটপূর্ণ রাস্তা ছাড়া বাকি রাস্তাগুলিতে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। কিন্তু গত ১৯ আগস্ট থেকে পরিচালিত মাসব্যাপী এই অভিযান আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিয়েছে, আমাদের সর্বশান্ত করেছে। তিনবেলা খাবার তো জুটছেই না, এনজিওর ঋণ শোধের বিষয়টা তো বলাই বাহুল্য।

তিনি আরো বলেন, আমরা দরিদ্র রিক্সাচালকরা আমাদের শ্রম কমাতে ও প্রযুক্তির সহায়তা নিতে ৪০-৫০ হাজার টাকা এনজিও থেকে ঋণ করে রিক্সায় ব্যাটারি লাগিয়েছি। এই ব্যাটারি সরকারের অনুমতিসাপেক্ষেই আমদানি হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এই রিক্সাগুলির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরিশালে মান্ধাতার আমলের ’মটর ভেহিকেল এক্ট’ -এর অজুহাত দেখিয়ে হাইকোর্টের দেয়া এক রায়ের কথা বলে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অথচ সেই আইন প্রণয়নের সময় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কোন অস্তিত্বই ছিল না।

শ্রমিকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরপরই আমরা তার সাথে দেখা করেছি, আবেদন করেছি আমাদের জীবিকা রক্ষার। তিনি শতাধিক রিক্সা শ্রমিকদের সামনে বলেছেন, তার শহরে গরীব মরবে না, রিক্সা চলবে। অথচ আমরা শুনতে পেয়েছি বর্তমানে প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ সিদ্ধান্তে এই নির্মম অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরপর আমরা বারবার সিটি মেয়রের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলেও, এই দুইমাস যাবৎ দুভার্গ্যবশত তার সাক্ষাৎ পাইনি। পুলিশ কমিশনার, ডিসি ট্রাফিকের সাথে সাক্ষাৎ করেও আমাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।এ বিষয়ে রিক্সা শ্রমিকদের উপদেষ্টা ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, গত দুমাস যাবৎ আমাদের রিক্সাশ্রমিকদের জীবিকা বন্ধ, নির্যাতন-নিপীড়ন এর পরও আমরা সবসময়ই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছি। মানববন্ধন সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ, শ্রমিকদের সন্তানদের মানববন্ধন, বরিশালবাসীর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, নাগরিক সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি করে আসছি।

তিনি বলেন,যেহেতু সারাদেশে এই ব্যাটারীচালিত রিক্সা চলছে তাই শহরের ব্যস্ততম রাস্তা বাদ দিয়ে এই রিক্সা চললে কোন সমস্যা হবে না এবং বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া এধরনের উচ্ছেদ অভিযান বরিশালের স্থিতিশীলতার জন্যও ভাল ফল বয়ে আনবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল মল্লিক,ব্যাটারী চালিত রিক্সা মালিক শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিস্ত্রি,জাহাঙ্গীর হোসেন দিদার,শহীদুল ইসলাম, জাকির হোসেন,বাবুল তালুকদার,মহসিন মীরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেত্ববৃন্দ।

Top