সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন
পাখি আক্তার:বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের বিহারীলাল একাডেমি ও পূর্ব ইলুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী,শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার সর্বস্তরের হাজারো মানুষ এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করেন।
এসময় নদীর তীরবর্তী ইলুহার বিহারীলাল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মাহবুব হোসেন বলেন স্কুলে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আর নদীও তীব্র ভাঙনে রুপ নিয়েছে। যেকোন সময় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় দু’টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ফলে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বাঁতিঘর হয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টি তাদেরকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে আর কতদিন শিক্ষাদান করতে পারবে সে ব্যপারে তিনি সন্দিহান। তাই সন্ধ্যা নদীর বালু উত্তোলনের ইজারা প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবী জানান তিনি।
একই দাবী জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন বালু উত্তোলনের জন্য বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ইজারা বন্ধ করতে তার কাছে ইউনিয়নের হাজারো সাধারণ মানুষ আবেদন করেছেন।বিশেষ করে যে স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টি গড়ে উঠেছে সেখানকার মানুষ বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করে তাদের জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।এদিকে ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের চিঠি উপেক্ষা করে ভাঙন কবলিত বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দিলে ওই দিনই জনস্বার্থে এর বিরুদ্ধে ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দুই বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব,ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব,বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী,বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার,জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব), পুলিশ সুপার,বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ওসির কাছে জবাব চেয়ে নোটিশ প্রধান ও বালু মহাল ইজারার ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ দেন।
স্থগিতাদেশের ওই মেয়াদ শেষ হলে আবারও বালু মহাল ইজারা দেওয়া হতে পারে এ আশঙ্কায় এ মানববন্ধন কর্মসূুিচ পালন করা হয়।প্রসঙ্গত, সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার।সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর মানবেতর জীবন।অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে।বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাহ্মনকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজারো একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট,ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে।হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম।উল্লেখিত, গ্রামগুলো মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। বালু উত্তোলনের কারনে ভেঙ্গেছে নদী, পুড়েছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ।আর কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল। গত জানুয়ারী মাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে এসে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।