প্রতিপক্ষকে ফাঁশাতে এবার নিজের পরিত্যাক্ত ঘরে আগুন - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিপক্ষকে ফাঁশাতে এবার নিজের পরিত্যাক্ত ঘরে আগুন


বাইজিদ রানা লিটন:বরিশালের উজিরপুরের সাতলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁশাতে এবার নিজের পরিত্যাক্ত ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি সদস্য হরশিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে। মন্দির ও পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা করার পর আদালত থেকে খারিজ হওয়ায় নতুন করে ফাঁশাকে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ইতিপূর্বে মন্দির কমিটির সভাপতি সুনীল বালা ও পুজা উদপাযন পরিষদের সভাপতি, দৈনিক সাহসী বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক এবং জিটিভির বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধি সাংবাদিক নিকুঞ্জ বালা পলাশসহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকার চাঁদাবাজি মামলা করে হরশিত মন্ডল। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অশন্তোষ বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়,উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ী গ্রামের শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের সামনে গত ৭-৮ বছর পূর্বে একটি দোকান ঘর নির্মান করে সাবেক ইউপি সদস্য হরশিত মন্ডল। এর পর হরশিতের পিতা হরিমোহন মন্ডল ওই দোকানে মুদি মালামাল বিক্রি করতো। গত ৩ বছর পূর্বে হরিমোহন মন্ডল ভারতে গিয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে দোকানটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে ছিলো। তবে দোকান ঘরটি মন্দিরের সামনে থাকায় পূজা-অর্চনাসহ বিভিন্ন ধর্মিয় অনুষ্ঠানে বিঘ্ন হয়েছিলোপূজা অর্চনা ও ধর্মিয় অনুষ্ঠানে সমস্যা হওয়ার কারনে মন্দির কমিটি, বাজার কমিটি ও এলাকাবাসী ওই পরিত্যাক্ত ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে সাবেক ইউপি সদস্য হরশিত মন্ডলকে। কিক্তু যতবার ওই পরিত্যাক্ত ঘরটি সরানোর জন্য বলা হয় ততবারই মন্দিও কমিটির সভাপতি-সম্পাদক, পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানী কওে হরশিত। ইতিপূর্বে হরশিত মন্দির কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের নামে ৪-৫টি মামলা দায়ের কওে বলে জানা গেছে। প্রতিটি মামলাই আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় তা খারিজ হয়ে যায়। আসন্ন দূর্গা পূজা উপলক্ষে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠান করার লক্ষে গত ২৫ আগস্ট পুনরায় ওই পরিত্যাক্ত ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করে মন্দির কমিটি-বাজার কমিটিসহ এলাকাবাসী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬ আগস্ট মন্দির কমিটির সভাপতি সুনীল বালা, পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশসহ মন্দির কমিটির ৭ জনকে আসামী করে ২ লাখ টাকার চাঁদাবাজি ও ভাংচুর লুটপাটের মামলা মামলা দায়ের করে হরশিত মন্ডল। চাঁদাবাজির মামলাটি পুলিশ তদন্তে গেলে এলাকার সকল শ্রেনী পেশার মানুষ হরশিতের নানান অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। চাঁদাবাজি ও ভাংচুর-লাটপাটের মামলাটি যে মিথ্যা এলাকার মানুষের জবানবন্দিতে তা বেড়িয়ে আসে। এর পর জনসম্মুখে মামলার আসাীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় হরশিত। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার গভীর রাতে ওই পরিত্যাক্ত ঘরটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী মামলার আসামীদের হয়রানী করার জন্য কিংবা নতুন মামলা কারার পরিকল্পানার অংশ হিসেবে হরশিত ও তার নিজস্ব লোকজন এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে পটিবাড়ী সার্বজনীন দূর্গা ও রাধা গবিন্দ মন্দির কমিটির সভাপতি বাবু সুনীল কুমার বালা বলেন, এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা হরশিত মন্ডল করতে পারে না। তিনি বলেন, মন্দিরের সামনে হরশিত মন্ডলের পরিত্যাক্ত একটি ঘর থাকায় কোন বছরই সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে আমরা পূজা অর্চনা করতে পারিনি। এখানে দূর্গা পূজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। কিন্তু ওই ঘরটি সরানোর অনুরোধ করা হলেই আমরা একের পর এক মিথ্যা মামলার শিকার হই।

সাম্প্রতি আমিসহ আমাদের ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি ও ভাংচুরের মামলা হয়েছে। এখন আবার নতুন ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন আমাদের ফাঁশাতে হরশিত মন্ডল ওই পরিত্যাক্ত ঘরে আগু দিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেড়িয়ে আসবে। তিনি বলেন, হরশিত মন্ডল যা শুরু করেছে তাতে আসন্ন দূর্গা পূজা করতে পারবো কিনা তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও আগৈলঝাড়া রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জল মন্ডল বলেন, হরশিত এক সময় আমার খুব কাছের লোক ছিলো। ওর নানান অপকর্মের জন্য এখন আর ওর সাথে সম্পর্ক রাখি না। তিনি বলেন, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আস্কর কালিবাড়ী স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বাবু প্রিয় লাল মন্ডল ও মনিপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের চীফ অ্যাকাউন্টেট অসীম কুমার বালা ও সকলের অত্যান্ত প্রিয়জন জিটিভির সাংবাদিক নিকুঞ্জ বালা পলাশানের মতো একাধিক মানুষের নামে নিজে ও অন্য একাধিক ব্যাক্তিকে দিয়ে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দিয়েছিলো হরশিত। বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় এলাকার শালিশ বৈঠকে হরশিতকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য হয়। হরশিত তাৎক্ষনিক ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তিনি বলেন, মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করাই ওর কাজ। ইতিমধ্যে এলাকার অসংখ্য মানুয়ের নামে ও বেনামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে হরশিত। বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেড়িয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও হরশিতের চাচাতো ভাইয়ের শ্যালক অমল বল্লভ বলেন, হরশিত এলাকার একজন ক্রিমিনাল। মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হররানী করাই ওর কাজ। ওর কারনে মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ইউপি মেম্বর থাকাকালীন ঘুষ ও দূনীতির কারনে এলাকাবাসী হরশিতের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছে।তবে হরশিত মন্ডলের ০১৮৫৮-৯৭১২৯৭ নাম্বারে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পাল বলেন, এ বিষটি শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

Top