হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল ইজারার ওপর - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল ইজারার ওপর


পাখি আক্তার:অবশেষে বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে বালু মহাল ইজারার ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব,বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান,বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব),আরডিসি ও সচিব জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি, জেলা পুলিশ সুপার, বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার অফিসার ইনচার্জকে জবাব চেয়ে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।১৯ আগস্ট বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জনস্বার্থে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবীতে উল্লেখিতদের বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে ২০ আগস্ট বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচাররপতি কেএম কামরুল কাদেরের যৌথ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত বরিশাল জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের চিঠি উপেক্ষা করে ভাঙন কবলিত বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।জানা গেছে, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বরিশাল-২(বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম বালু মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল(অব.) জাহিদ ফারুক শামিম ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের কাছে ডিও লেটার দেন।ভূমি মন্ত্রী ওই ডিওলেটার পেয়ে জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি বাতিলের জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেন। ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রীর ওই চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার পাওয়ার পরেও তা উপেক্ষা করে ২০ আগস্ট সন্ধ্যা নদীর ৮ টি পয়েন্টে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়।

এনিয়ে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হাজারো পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বালু মহাল ইজারা বন্ধ করা না হলে নদীর তীরে যেকোন সময় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেয়।উল্লেখ্য, সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর মানবেতর জীবন। অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে।বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাহ্মনকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজারো একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম।উল্লেখিত গ্রামগুলো মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। সম্প্রতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল(অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। গত জানুয়ারী মাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে এসে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।এদিকে হাইকোর্ট বালু মহাল ইজারার ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

Top