পূর্বাঞ্চলে পিপিলিকার মতো বেড়েছে বেকারি লাইসেন্সবিহীন তৈরি হচ্ছে খাদ্যপন্য ! কর্তৃপক্ষ নীবর
রেদওয়ান শাওন:বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় অবাধে গড়ে উঠেছে মান নিয়ন্ত্রণহীন খাদ্য উৎপাদনকারী (বেকারি) প্রতিষ্ঠান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত এসব বেকারির খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে নিম্মমানের ভেজাল খাদ্য সামগ্রী। লাইসেন্সবিহীন এই বেকারির খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে কেক, বিস্কুট, টোষ্ট, পাউরুটিসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য। এসব খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটজাত করে নিজেদের ইচ্ছামত বাজারজাত করা হচ্ছে। সরকারি আইন অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিএসটিআই থেকে সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক, অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক বেকারি প্রতিষ্ঠান। যার তালিকার মধ্যে রয়েছে চরকাউয়া বাস স্টান্ড, তালুকদার মার্কেট, রাজারহাট ব্রীজ, সাহেবের হাট, লাহারহাট, চন্দ্রমোহন, পতাং বাজার, কানাইপুরা, বৈরাগীবাড়ি পোলসহ অনেক জায়গা। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। আছে শুধু ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স। বিএসটিআই কি তা অধিকাংশরাই জানেন না।
অভিযোগ রয়েছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।বেকারিতে উৎপন্ন খাদ্য পাড়া-মহলা, স্কুল-কলেজের সামনে, বাজারের বিভিন্ন চায়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। এসব খাদ্যে প্যাকেট উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের অস্তিত্ব নেই। অনেক জায়গায় পচা ও বাসি খাদ্য বিক্রি করা হয়। ফলে কোমলমতি শিশুরা পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের দ্বারস্থ না হওয়ায় এসব বেকারির উৎপন্ন খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকনিশিয়ান না থাকায় নিজেদের কলাকৌশলে আটা, ময়দা, ডালডা, সোডা, বিভিন্ন ধরনের রঙ মানব ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আর তা তৈরিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয় ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের। উপজেলার বৈরাগীবাড়ি পোল সংলগ্ন একটি বসতবাড়ি’র ভিতরে বেকারিতে গিয়ে দেখা যায় এখানে ছোট শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, এমনকি ময়দা গোলা পাত্রে দেখা গেছে মশা মাছি। কেক তৈরির পাত্রে জমে রয়েছে ময়লা আবর্জনা, যা দেখলে জনসাধারনের ভক্তি উঠে যাবে। এমনকি নোংড়া ময়দা দিয়েই তৈরি হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। বৈরাগীবাড়ি বেকারি প্রতিষ্ঠানে কাজে নিযুক্ত রয়েছে এক শিশু ওর বয়স ১৩-১৫ বছরের নিচে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব বেকারিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ গ্যাস। উল্লেখ্য বৈরাগীবাড়ি বেকারির বর্তমান মালিক মোঃ মন্জুরুল ইসলাস এসব ভেজাল অসাস্থকর খাদ্য মার্কেটে বিক্রি করেন। ছোট ছোট শিশুদের দিয়ে জলন্ত চুল্লিতে বেকারি পণ্য উঠা নামা করা সহ নানান অনিয়ম করে চলেছেন সেই বেকারি মালিক। জানতে চাইলে বেকারির মালিক বলেন, উপজেলার অন্যসব বেকারি যেভাবে চলছে তারটাও সেভাবে চালানো হচ্ছে। ভূক্তভোগীরা জানান, এলাকার প্রভাবশালী অনেকে এই বেকারির মালিক পক্ষের সাথে জড়িত। যার কারণে তারা বেকারির বিরুদ্ধে আইনি কোন অভিযোগ করছেন না। বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সচিত্র প্রতিবেদন প্রস্তুুত করতে গেলে প্রতিবেদকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন বৈরাগীবাড়ি বেকারির মালিক। এদিকে বেকারি মালিকের স্ত্রী বলেন, আপনারা লিখবেন তাতে কি হবে আমাদের বেকারিতে বরিশাল থেকে মেজিষ্ট্রেট আসছিলো তারা কাগজপত্র দেখে গেছে এবং কোন ময়লা আবর্জনা নেই। বরিশাল সদর উপজেলা ফুড ইন্সপেক্টর মোঃ জাকির হোসেন আজাদ বলেন, আমি সকল বেকারি মালিকদের লাইসেন্স করার জন্য বলেছি। অনেকেই দরখাস্ত করেছেন তবে আমাদের সনদপত্র কেউ না নিয়ে যদি বাচার জন্য মিথ্যা বলে তাহলে খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্বে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। অস্বাস্থকর পরিবেশে খাদ্যপন্য তৈরি করায় এসব খাদ্যপন্য কিনে খাচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও চায়ের দোকানের কাষ্টমার, এমন অভিযোগ করেছেন সাধারন জনতা। তারা বলেন অবৈধ ও বিনা লাইসেন্সে বেকারি মালিকরা পন্য বিক্রি করতেছেন, আমরা মনে করি এই সিন্ডকেট বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ’র কঠোর নজর দেয়া দরকার। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারকে ফোন করলে তার ফোন ব্যাস্ত পাওয়া যায়।