নলছিটির কুখ্যাত মাদক সম্রাট যৌন নিপীড়নকারী শাহীনের অব্যাহত ত্রাসে জিম্মি মগড়
বিশেষ প্রতিনিধি:ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যৌন নিপীড়নকারী নলছিটির কুখ্যাত মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন আরও আগেই এলাকায় গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ এক ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্র। চেয়ারম্যান শাহীনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাঁর ভয়ে তটস্থ এলাকার সাধারণ মানুষ।এর ফলে এলাকার শান্তিপ্রিয় নারী পুরুষ অতিষ্ঠ, তার অস্ত্রধারী বাহিনীর ভয়ে সাধারণ জনগণ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। মাদক বাণিজ্য, অস্ত্র ব্যবসা, ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, কিলিং মিশনসহ অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে মাদক সম্রাট শাহীনের বিরুদ্ধে। এমনকি যৌন নিপীড়নকারীও এই শাহীন। এবং তার সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের টার্গেট করে যৌন হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে মাদক সম্রাট শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানীকারীদের অন্যতম শেল্টারদাতাও অস্ত্র ব্যবসায়ী এনামুল হক শাহীন। অতিম্প্রতি বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ এর এক ছাত্রী ও তার বড় বোন অন্য কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্রীকে নানান কায়দায় যৌন হয়রানী করে আসছে এক বখাটে । সেই বখাটের শেল্টারদাতা হলেন মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। জামিনে বেরিয়ে অসংখ্য অপকর্মের হোতা এনামুল হক শাহীন আরো বেপরোয়া হয়ে পুরো মগড় ইউনিয়ন ও আশপাশ এলাকায় মাদক, অস্ত্র ব্যবসাসহ ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মরিয়া হয়ে উঠে।
প্রশ্ন হচ্ছে-যেখানে সরকার মাদক, যৌন হয়রানি, অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে অবস্থান করছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করে মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি যৌন নিপীড়নকারী বা যৌন হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধেও সরকার জিরো টলারেন্স। এরপরও একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, যিনি মাদক সম্রাট হিসেবে বহুল পরিচিত। মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন এবং তার ভাই আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী সবুজ হাওলাদার অসংখ্যবার নানা অপকর্মে বিভিন্ন পত্রিকায় মিডিয়ার শিরোনামও বনে গেছেন। তবুও কোন এমন অদৃশ্য শক্তিতে মাদক সম্রাট শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বহাল তবিয়তে থেকে অপরাধের স্বর্গ রাজ্যে টিকিয়ে রাখছেন।জনশ্রুতি রয়েছে- স্থানীয় থানা পুলিশের কয়েক অসাধু পুলিশ সদস্যদের সাথে গোপন বনিবনায় গভীর সখ্যতায় মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন তার অপরাধ সাম্রাজ্যের পরিধি বেড়েই চলছে। এ যেনো আরেক এরশাদ শিকদার। চতুর শাহীন, চলেন ম্যানেজ প্রক্রিয়ায়। অসমর্থিত একাধিক সূত্রের ভাষ্য, বর্তমান সরকার যেখানে মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, যৌন হয়রানীকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে, এরকম পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই স্থানীয় অসাধু পুলিশ সদস্য ও কর্তাদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের বুনিবনায় একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী কিভাবে কোন শক্তির শেল্টারে অপরাধের ফিরিস্তি রচনা করে চলছেন।কে এই মাদক সম্রাট শাহীন : এনামুল হক শাহীন নলছিটির মগড় গ্রামের মোশারেফ হোসেনের ছেলে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচন নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে থেকে শাহীন এলাকায় ফেনসিডিলের কারবার করতেন। চেয়ারম্যান হয়ে ফেনসিডিলের কারবার প্রসার করেন। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর নলছিটির বড়প্রেমহার গ্রামীণফোনের টাওয়ার-সংলগ্ন ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে দুই হাজার দুই বোতল ফেনসিডিলসহ শাহীনকে আটক করে র্যাব। এ সময় শাহীনের সহযোগী প্রাইভেট কারের চালক মাসুম বিল্লাহকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় বরিশাল র্যাব-৮-এর উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) দেলোয়ার হোসেন নলছিটি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান শাহীন।জেল থেকে বের হয়ে আবার শুরু করেন ফেনসিডিল বিক্রি। গড়ে তোলেন মাদক আখড়া। এখানে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বাকেরগঞ্জ থেকে ক্রেতারা এসে ফেনসিডিল সেবন করত। ২০১২ সালের ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম আসামি শাহীন ও মাসুমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ঝালকাঠির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি পাঠানো হয়। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয় নলছিটি থানায়। অপরদিকে বড় ভাইয়ের দেখানো পথে হাঁটছেন ছোট ভাই সবুজ হাওলাদার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মগড় এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপপরিদর্শক (এসআই) শামীমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই গ্রামের জামাল হাওলাদারের বাড়িতে অভিযান চালায়। সবুজ ও তাঁর সহযোগী খাইরুল হাসান ঘরের ভেতরে ইয়াবা বিক্রির জন্য প্যাকেট করছিলেন।
পুলিশ সবুজকে গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান খাইরুল। এ সময় ১০০ পিস ইয়াবা, নগদ ৫০০ টাকা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্রের ভাষ্য- মাদক সম্রাট শাহীনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পাহাড় থাকলেও তিনি থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। এতে শান্তিপ্রিয় নারী পুরুষ অনেকেই নিরবে ক্ষোভ প্রকাশ করে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে।
তাদের ভাষ্যমতে- অর্থের মাধ্যমে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় তার অপকর্মগুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখা হচ্ছে।সূত্রের ভাষ্য- শাহীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভূমি দখল,চাঁদাবাজীরও রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। কিন্তু কে প্রতিবাদ করবে, প্রতিবাদ করলে উল্টো প্রতিবাদকারীকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে দেয়া বা প্রতিবাদকারীর জীবনলীলা সাঙ্গ করে দিতে মত্ত থাকে নলছিটির কুখ্যাত এই মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ’র এক ছাত্রী ও তার বড় বোন কলেজ ছাত্রীকে ঝালকাঠির নলছিটির মগড় ইউনিয়নের ডুবিল গ্রামের মুনসুর আলী হাওলাদারের বখাটে পুত্র সবুজ কর্তৃক যৌন হয়রানি করায় নলছিটি থানায় একটি জিডি করা হয়। যার নং-৭৯৪, তারিখ : ২১/০৭/১৯ ইং। বখাটে সবুজের পক্ষাবলম্বন করে সেই জিডি তুলে নেয়ার জন্য বার বার কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবারকে বিভিন্ন কায়দায় চাপ প্রয়োগ করে আসছে চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন ও অপরাধী চক্র। চেয়ারম্যানের কথামতো জিডি না উঠানোর ফলে ২৮ জুলাই দুপুর ১২ টা ৮ মিনিটে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ছাত্রীর সেলফোনে চরম অসভ্য, বর্বর ভাষায় গালাগাল করে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। এরবাইরে গ্রাম্য কয়েকজন মোড়লও অর্থের বিনিময়ে বখাটের পক্ষে হয়ে তাকে রক্ষায় জিডি তুলে নিতে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীদ্বয় ও পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদান করে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের গ্রাম্য কয়েক মোড়ল হুমকী দিয়ে বলেন, জিডি না তুললে উল্টো তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
মগড় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন সাংবাদিকদের বলেন,ভাই ও আমি দুজনই ষড়যন্ত্রের শিকার। সমাজে আমাদের হেয় করার জন্য একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। আমি ও আমার ভাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই।বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানী ও হুমকী প্রসঙ্গে বলেন- একটি বিষয়ে ওই কলেজ ছাত্রীর পিতার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাকে ফোনে ধরিয়ে না দিয়ে কলেজ ছাত্রী ফোন ধরলে আমার মাথাটা গরম হয়ে যায়।এ কারণে কিছুটা কলেজ ছাত্রীকে বকাবকি করেছি। নোংরা ভাষায় গালাগাল এবং কলেজ ছাত্রীকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকী প্রসঙ্গে বলেন-তখন মাথাটা অনেক গরম ছিলো। দ্বাম্ভিকতার সুরে বলেন-আমি এলাকার চেয়ারম্যান,আমি যা বলবো তাই হবে।
চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন কর্তৃক বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ ছাত্রীকে নোংরা ভাষায় গালাগাল ও হুমকী প্রদানের বিষয়টি নলছিটি থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেনকে অবহিত করলে তখন তিনি বলেন- চেয়ারম্যান কেন কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে? এরপর বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান ওসি সাখাওয়াত হোসেন। মুনসুর আলীর বখাটে পুত্র সবুজ কর্তৃক কলেজ ছাত্রীদের হয়রানী প্রসঙ্গে বলেন- বিষয়টি আমি দেখতেছি। প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্ত থাকতে বলেছি,পরবর্তীতে সুবজ ও তার পরিবারকে এ নিয়ে উচ্চবাচ্চ না করার কথা বলে এসেছি। সবুজ ও তার পরিবার ভবিষ্যতে কোন সমস্য বা ক্ষতি করার চেষ্টা করে,সেই বিষয়টি আমি দেখবো বলে মন্তব্য করেন ওসি সাখাওয়াত হোসেন।
ওদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পুরো সময়ই বখাটে সবুজ ওসি সাখাওয়াত হোসেন এর সাথে ছিলো। ওসি ঘটনাস্থল ত্যাগ করার কিছুক্ষন পরেই বখাটের মা দস্যু প্রকৃতির আনোয়ার বেগম ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীদ্বয় ও তাদের পরিবারকে উদ্দেশে করে কুরুচিপূর্ন ভাষায় আচরন এবং দেখিয়ে দেয়ার হুমকী দেয়। এরপরে বখাটেপুত্র সবুজ এসেও সেই আড়ের মতো দ্বাম্ভিকতার সুরে প্রকাশ করেন-পুলিশ আমার পকেটে থাকে,টাকা থাকলে আইন আদালত পুলিশ সবই কেনা যায়। কলেজ ছাত্রীদ্বয় ও পরিবারকে উদ্দেশে করে আরও প্রকাশ করে,সামনে তোদের খবর আছে, তোদের মান সন্মান ইজ্জ্বত লুটে নিবো। এরূপ ঘটনার পরও ওইদিন ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী ওসি সাখাওয়াত হোসেনকে সেলফোনে বখাটে ও তার মা কর্তৃক বর্বর আচরন ও হুমকির বিষয়টি অবহিত করেন।
তৎসময়ে ওসি সাখাওয়াত ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীকে বলেন- ওরা কি বলে তোমরা সব রেকর্ডিং করে রাখ, আমি আবার পরে এসে দেখবো। ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীদ্বয় ও তার পরিবার ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উল্লেখিত বিষয়টি নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঝালকাঠি পুলিশ সুপার, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, বরিশাল র্যাব-৮, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, আইজিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।
একইসঙ্গে মাদক সম্রাট যৌন নিপিড়নকারী ও যৌন নীপিড়নকারীদের শেল্টারদাতা এনামুল হক শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গসহ ইফটিজার ও ইফটেজারদের রক্ষার পাঁয়তারায় মত্ত গ্রাম্য মোড়লদেরও বিষয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি কামনা করেছেন অসহায়, নীপিড়িত, অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার, শান্তিপ্রিয় নারী পুরুষ।