সেই কালো রাতের গল্প বাঙালির রাষ্ট্রহীন - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেই কালো রাতের গল্প বাঙালির রাষ্ট্রহীন


আলোকিত বাতা:২৫ মার্চ। যুদ্ধের কোনো দামামা বাজেনি সেদিনও। তবুও যুদ্ধ। ঘুমন্ত নগরবাসী। তবুও সর্বশক্তি প্রয়োগ সামরিক জান্তার। দুনিয়ার যুদ্ধ ইতিহাসের এমন কলঙ্কময় অধ্যায় আর দ্বিতীয়টি হয়নি, যা করেছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী।রক্তের হলি খেলায় উম্মাদ বনে যাওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সমস্ত মানবিকতা পরাজিত হয়েছিল সেদিন। একই রাষ্ট্র, একই শাসক। তবুও হিংস্রতায়, ক্ষিপ্রতায় কোনো কমতি ছিল না ইয়াহিয়া সরকারের।একটি রাতের অভিযান। তাতেই যেন রক্তগঙ্গা। রাজপথে মিলল শুধুই লাশের মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, রিকশাচালক পড়ে রইল নিথর দেহে। শিশু, নারী, বৃদ্ধরাও বাদ গেল না পাকিস্তানি হায়েনার বুলেট থেকে।

ধর্মের দোহাই দিয়ে সব অধর্মের ঘটনাই ঘটালো তারা। রক্ত-খুনেই থেমে থাকেনি ওরা, আগুনের লেলিহান শিখায় দোযখে রূপ দেয় ঢাকার অলিগলি। খুন-আগুনের নির্মমতায় বাঙালির নিশানা মুছে দিতেই পাকিস্তান হায়েনারা চালিয়েছিল এ পৈশাচিকতা।২৫ মার্চের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে রয়টার্সের সাংবাদিক সাইমন ড্রিং লিখেছেন, ‘আমরা দেখলাম, দুই দিন পরও পুড়িয়ে দেয়া কক্ষগুলোতে ছাত্রদের মৃতদেহ একটু একটু করে পুড়ছিল। অনেক মৃতদেহ বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, অবশ্য হলের পার্শ্ববর্তী পুকুরেই বেশিরভাগ মৃতদেহ ভেসে ছিল। চারুকলার একজন ছাত্রের মৃতদেহ পড়ে ছিল তার ইজেলের পাশেই হাত-পা ছড়িয়ে। সাতজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। বাইরের ঘরে লুকিয়ে থাকা ১২ সদস্যের এক পরিবারের সবাইকেই হত্যা করা হয়েছে। সৈনিকরা অনেক মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছে। ইকবাল হলে এখনো ৩০টি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।’

লাশের গন্ধ আর স্বজন হারানোর আহাজারিতে সেদিন ঢাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্রে থেকেও সেদিন রাষ্ট্রহীন হয়েছিল বাঙালিরা। খোদ রাষ্ট্রই নিপীড়নের দেয়াল তুলে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, ভোটের অধিকার চাওয়া দলিত এ জনগোষ্ঠীর ওপর। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বামপন্থি এ রাজনীতিক।২৫ মার্চ ঢাকার হাতিরপুল সংলগ্ন একটি বাসায় অবস্থান করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ওই দিনের প্রত্যক্ষদর্শী এ রাজনীতিক বলেন, ‘সে দিনের বিভৎস্যতা কোনো ভাষায় বর্ণনা করবার নয়। একটি নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর এভাবে হামলার ঘটনা পৃথিবীতে আর হয়েছিল কিনা জানা নেই।স্মৃতিচারণ করে সেলিম বলেন, ‘চারাদিকে হত্যা আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানুষ দিশেহারা। সত্যি কথা, সেনা অভিযানে যে এমন হত্যাযজ্ঞ হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। মধ্যরাত থেকেই কারফিউ চলছিল। বাইরে বের হলেই গুলি করা হচ্ছিল। বস্তি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছিল। গণহত্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল ২৫ মার্চ মধ্য রাত থেকেই।

Top