আর্থিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে ,ব্যাংক খাতে লুটপাটের ক্ষত - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আর্থিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে ,ব্যাংক খাতে লুটপাটের ক্ষত


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের প্রভাব আরও দৃশ্যমান হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর মৌলিক সূচকের মানে আরও অবনতি হচ্ছে।যা ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে।এসব মিলে ক্রমেই অবনতির দিকে ব্যাংক খাত। তবে যেসব ব্যাংকে লুটপাট হতে পারেনি সেসব ব্যাংক শক্ত আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।মূলধন সংরক্ষণের হার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে।বেড়ে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে এখন নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের মাত্রা। ব্যাংকগুলোর আয়ও ধারাবাহিকভাবে কমছে। আয় থেকে খরচ, প্রভিশন ঘাটতি মিটিয়ে এবং কর পরিশোধের পর এখন কোনো মুনাফা থাকছে না। উলটো লোকসানে চলে গেছে। সম্পদের মানে অবনতি ঘটেছে। আয়যোগ্য সম্পদ কমে গেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে লুটপাটের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ সবই খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ওই সরকারের শেষ সময়ে গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। আলোচ্য ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।এদিকে গত জুন পর্যন্ত তা আরও বেড়ে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ বাড়ার ফলে ব্যাংকগুলোর আয়যোগ্য সম্পদ কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিও মেটাতে পারছে না। গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোর ১০০ টাকার সম্পদ থেকে আয় ছিল দশমিক ৪০ পয়সা। গত মার্চে সম্পদ থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো আয় হয়নি। উলটো লোকসান হয়েছে ১৮ পয়সা। গত জুনে ১০০ টাকার সম্পদ থেকে লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সায়। গত বছরের জুনে ১০০ টাকার মূলধন থেকে ব্যাংকগুলোর আয় ছিল ৭ টাকা ৮৫ পয়সা। গত মার্চে কোনো আয় হয়নি। উলটো লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৯৯ পয়সা। গত জুনে এই লোকসান আরও বেড়ে ১৬ টাকা ১১ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের জুনে ৮টি ব্যাংকের সম্পদ থেকে কোনো আয় হয়নি। গত জুনে ২১টি ব্যাংক সম্পদ থেকে কোনো আয় করতে পারেনি। গত বছরের জুনে ১৭টি ব্যাংক সম্পদ থেকে আয় করেছিল দশমিক ৫ শতাংশের বেশি থেকে ১ শতাংশের কম। গত জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭টি ব্যাংকের। আলোচ্য সময়ে ১ শতাংশের বেশি আয় করা ব্যাংকের সংখ্যা ২১টি থেকে কমে ১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুনে ৯টি ব্যাংক মূলধন থেকে কোনো আয় করতে পারেনি। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখা ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত জুনে মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। এখন চাহিদার তুলনায় মূলধন রয়েছে অর্ধেকেরও কম। ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে গেছে।ব্যাংকগুলোর আয় কমার প্রধান কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি। লুটপাটের কারণে ঋণ আদায় না হওয়ায় খেলাপি ঋণ ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। এতে ব্যাংকের অকার্যকর বা আয় না হওয়া সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। কারণ ঋণখেলাপি হয়ে গেলে এ থেকে কোনো আয় হয় না। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো যে সুদ হিসাব কষে সেগুলোও আয় খাতে নিতে পারে না। এগুলো স্থগিত সুদ হিসাবে রাখতে হয়। ঋণ আদায় বা নবায়ন হলেই কেবল ওইসব সুদ ব্যাংকগুলো আয় খাতে নিতে পারে। এখন স্থগিত সুদের পরিমাণ বেড়ে লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

২০২৩ সালের জুনে ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ ২৮টি ব্যাংকে। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬টিতে। মার্চে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১৫টিতে। অর্থাৎ কম খেলাপি ঋণের ব্যাংকের সংখ্যা কমছে, বাড়ছে বেশি খেলাপি ঋণের ব্যাংক। ২০ শতাংশের বেশি থেকে ৩০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ ২০২৩ সালের জুনে ছিল ২টি ব্যাংকে। গত মার্চে তা বেড়ে ৪টিতে দাঁড়িয়েছে। ৩০ শতাংশের বেশি থেকে ৫০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ আলোচ্য সময়ে ছিল ২টি ব্যাংকে। গত মার্চে তা বেড়ে ৫টিতে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ ছিল ৫টি ব্যাংকে। গত মার্চে তা বেড়ে ১০টিতে দাঁড়িয়েছে।খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মূলধন কমে যাচ্ছে। মূলধনের দিক থেকে কমপ্লায়েন্স ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫১টি। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১টিতে। ১০ শতাংশের কম মূলধন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১০টি ব্যাংকের, গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০টি ব্যাংকে।

Top