চলছে প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম,প্রবাসে মাসে ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ৭১৩ জন!
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :২৯ মাস ধরে চলছে প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম। এই সময়ে আবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় পর নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছেন ২০ হাজার ৬৭৬ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৭১৩ জনকে ভোটার করতে পেরেছে সংস্থাটি।ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি, সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহাম, ইতালির রোম ও মিলান, কুয়েতের কুয়েত সিটি, কাতারের দোহা, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা ও সিডনি, কানাডার অটোয়া ও টরন্টো, জাপানের টোকিও, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, মিয়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস-এই ১১টি দেশের ২১টি স্টেশনে এই কার্যক্রম চলছে।২০২৩ সালে এ কাজ হাতে নেয় ইসি। ওই বছর ১৮ মে আমিরাতে কার্যক্রম শুরু হয় পুরোদমে। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারণ করা হয়। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট আবেদন পড়েছে ৬১ হাজার ১১৯টি। দূতাবাস অফিসে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৯০ জনের।তদন্ত সম্পন্ন হয়ে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ২৫ হাজার ৭১১ জনের। অপেক্ষমাণ আছে এক হাজার ৩৬টি আবেদন। বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ১৩৬ জনের আবেদন। তদন্ত অপেক্ষমাণ আছে ২৯ হাজার ২৪৭ জনের।এছাড়া ইসির সার্ভারে আপলোড হয়েছে ২০ হাজার ৬৭৬ জনের তথ্য। এ পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাপানো হয়েছে ১৫ হাজার ৩১ টি। দূতাবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মাঝে বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৭১৯টি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আরও চার দেশে আমরা এই কার্যক্রমটা শুরু করব। তবে এই নির্বাচনের মধ্যে কতটুকু তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এটা একটু প্রশ্ন। কেননা, একটা পদ্ধতিতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি কারিগরি দল পাঠিয়ে তারপর সিস্টেমটাকে স্থাপন করে সংবেদনশীল করতে হচ্ছে। এতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা যে ভোটার নিবন্ধনের চেকআউট ডেটটা করেছি, সেটাতে কতটুকু হবে বলতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি করা যায়। আগামীতে ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপ, জর্ডান, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স এবং স্পেনে এই কার্যক্রম শুরু হতে পারে।ভোটার হওয়ার অগ্রগতি কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসে যারা আছেন তাদের বিরাট অংশ ইতোমধ্যে ভোটার হয়েই বিদেশে গেছেন। এটা একটা বড় কারণ। কাজেই হওয়ার প্রবণতা কম বিষয়টা এমন নয়। এছাড়া প্রবাসীরা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারাও হয়তো ঠিকমতো আসতে পারেন না দূতাবাসগুলোতে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সে লক্ষ্য নিয়েই প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম বেগবান করার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। ভোটার কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রবাসীদের এনআইডি সরবরাহ করছে সংস্থাটি। এজন্য দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটার করে নিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিতে তার কমিশন অন্তত শুরুটা করতে চান। সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে চান। সিইসি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মতো আমরা নির্বাচন কমিশনও আগামী নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রবাসীদের চার তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক
বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম–২(ক), মেয়াদসম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট/মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট/এনআইডিধারী তিন নাগরিকের প্রত্যয়ন, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে (দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে) জমা দিতে হবে।এদিকে বিশেষ ৫৬ টি উপজেলা/থানার (চট্টগ্রাম অঞ্চল) নাগরিকদের জন্য ‘বিশেষ তথ্য ফরম’ পূরণ, শিক্ষা সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি, মৃত হলে মৃত্যু সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কিছু দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক), ইউটিলিটি বিলের কপি (ভোটার এলাকার ঠিকানার বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের কপি, ভাড়াটিয়া হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র) জমা দিতে হবে।বাধ্যতামূলক নয়, এমন তথ্যগুলো নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকরা দেশে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে পারবেন। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে বসে ভোটার হওয়ার ফরম পূরণ করলে এবং সব তথ্য সঠিক থাকলে, নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তির উপজেলায় তদন্ত করে সঠিকতা নিশ্চিত হয়। এরপর তথ্যের সঠিকতা পেলে সেই ব্যক্তির আবেদন অনুমোদন করে ভোটার করা হয়। একই সঙ্গে তার এনআইডি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কে. এম. নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম বা এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে, একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির কমিশন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসহ (বায়রা) বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এই সব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো-সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিতানিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এই সব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে-৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে-দুই হাজার ৫০০ জন। এই সব দেশেই ভোটার কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শুরু করবে কমিশন।