ঋণ আদায় কম হওয়ায় খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণ আদায় কম হওয়ায় খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে


মু.এ সিদ্দীক ভুঁইয়া:সম্পদ বা বিনিয়োগ থেকে এখন কোনো আয় নয়, লোকসান হচ্ছে। খেলাপি ঋণের ভারে মূলধন পুরোটাই ক্ষয় হয়ে গেছে। ফলে এখন মূলধন থেকেও কোনো আয় নেই। সম্পদের চেয়ে দেনা বেড়ে গেছে।ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর বা লিজিং খাতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ খাতে গত কয়েক বছর ধরেই গড়ে লোকসান চলছে। ঋণ আদায় কম হওয়ায় খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। তবে কিছু ফাইন্যান্স কোম্পানি ভালো চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংকের পাশাপাশি ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতেও (সাবেক নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে পিকে হালদার একাই ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লুট করেছেন ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। যার বড় অংশই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবে এস আলম গ্রুপসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো থেকে অর্থ লুট করেছেন। এসবের বেশির ভাগই প্রকাশিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। কিন্তু ওই সরকার লুটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান সরকারের সময়ে এগুলো আরও বেশি প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধারের সুযোগ নেই। বাকিগুলোর উদ্যোক্তারা যদি বাড়তি মূলধনের জোগান দেন ও খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হন তাহলে একটু সময় নিয়ে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা যেতে পারে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বাড়ার কারণে গত বছরের জুনে এসে ওই মূলধনও ক্ষয় হয়ে যায়। ফলে এখন ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর গড়ে কোনো মূলধন নেই। উলটো মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। তবে যেসব ফাইন্যান্স কোম্পানি ভালো চলছে সেগুলোর মূলধনসহ সব সূচকেই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

গত বছরের জুনে এসে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ঘাটতি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। দুর্বল কোম্পানিগুলোতে মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি আমানতের ঘাটতিও বেড়েছে। ফলে এসব কোম্পানি চলতে পারছে না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৪টি ফাইন্যান্স কোম্পানির মধ্যে ২০টি কোম্পানিকে দুর্বল হিসাবে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ৯টি কোম্পানি অতি দুর্বল। এদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মার্চ পর্যন্ত তথ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ ও মূলধন থেকে কোনো আয় হচ্ছে না। উলটো লোকসান হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরেই এসব খাতে লোকসান হচ্ছে। ডিসেম্বরে সম্পদ থেকে লোকসান ছিল ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মার্চে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুনে মূলধন থেকে লোকসান ছিল ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এখনো তা লোকসানি। তবে এখন কোনো মূলধন নেই। সব মূলধন ক্ষয় হয়ে গেছে। ফলে এ খাত থেকে যেমন কোনো আয় নেই, তেমনি লোকসান দেওয়ার অবস্থাও নেই।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। যা ছিল মোট লিজিং বা বিনিয়োগের ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা ছিল মোট বিনিয়োগের ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। মার্চের পর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে।

মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর দেনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সম্পদ রয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার সামান্য বেশি। এখন ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর দায়দেনার অনুপাত বেড়ে ১১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার সম্পদের বিপরীতে দেনা ১১২ টাকা। ফলে এখন ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর দায় শোধের সক্ষমতাও নেই। তবে এটি গড় হিসাব। দুর্বল ২০ ফাইন্যান্স কোম্পানির ক্ষেত্রে এ অনুপাত আরও প্রকট। ফলে আমানতকারীরা দুর্বল কোম্পানিগুলো থেকে আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অনেক কর্মী বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দুর্বল ২০ কোম্পানির মধ্যে ৮টির খেলাপি ঋণ প্রায় শতভাগ। বাকিগুলোর খেলাপি ঋণও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। নতুন আমানত পাচ্ছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান এখন নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের ৮৩ শতাংশেরই কোনো জামানত নেই।

Top