ব্যাংক খাতে লুটপাট ও টাকা পাচারের কারণে অর্থনীতির গতি কমছিল - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
প্রাথমিকে পোষ্য কোটা বাদ, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ কোনো অবৈধ বিদেশির জায়গা হবে না বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি পরিবর্তন হলেও আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা হেড অফিসে রয়েছে বহাল তবিয়তে এিপুরা , কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এিপুরা , কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এিপুরা ,কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এবার বিআরটি লেইনে গুলিস্থান হয়ে গাজীপুর চলাচল করবে বিআরটিসির এসি বাস ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত অবসরপ্রাপ্ত সেনারা,ভারতের সঙ্গে আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয় অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মারা এখনো অবস্থান করছে থেমে আছে গ্রেফতারের উদ্যোগ

ব্যাংক খাতে লুটপাট ও টাকা পাচারের কারণে অর্থনীতির গতি কমছিল


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের বেশির ভাগ সময়ই অর্থনীতিতে মন্দাভাব ছিল। দেশের ব্যাংক খাতে লুটপাট ও টাকা পাচারের কারণে অর্থনীতির গতি কমছিল। সূচকগুলোর প্রকৃত অবস্থা লুকিয়ে কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর কারণে অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বাইরে থেকে বোঝা যায়নি। সরকারের শেষ সময়ে অর্থনীতির সূচকগুলোর সার্বিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। করোনার পর ২০২২ সালে বৈশ্বিক মন্দা শুরু হলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা প্রকট হয়। এর ধকল বিশ্বের প্রায় সব দেশ কাটিয়ে উঠলেও বাংল্লাদেশ গত ২ বছরেও পারেনি। উলটো মন্দার ক্ষত আরও প্রকট ও দৃশ্যমান হচ্ছিল। গত সরকার কারসাজির মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আড়াল করে রেখেছিল। লুকোচুরির সূচকে অর্থনীতির অবস্থা সবল দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যবস্থাপনায় এখন প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। বর্তমানে টাকা ছাপানো বন্ধ, টাকা পাচার এবং ব্যাংক খাতে লুটপাট না হলেও অর্থনীতির স্থবিরতা কাটেনি। শিল্প ও বিনিয়োগেও স্থবিরতা বিরাজমান। তবে কৃষি খাত চাঙা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকার গত দুই অর্থবছরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে। চলতি অর্থবছরের জন্যও তারা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল। এই সরকারও এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মুদ্রানীতিকে আরও কঠোর করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারের ব্যয়নির্বাহের পাশাপাশি সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকেও দিয়েছে। একদিকে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ কামনো হয়েছে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে টাকার প্রবাহ দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনবরত বল্লা হয়েছে, গত অর্থবছর থেকে আর ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মিথ্যা প্রচারণা; অন্যদিকে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার কারণে টাকার প্রবাহ তো কমেনি, বরং বেড়েছে। এতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে বল্লা হয়েছিল, টানা দুই বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির পরও মূল্যস্ফীতির কমছে না কেন? বিশ্বের প্রায় সব দেশ টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়েছে। এমনকি অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলংকাও মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু বাংল্লাদেশে এ হার তো কমেইনি, উলটো আরও বেড়েছে।

সূত্র জানায়, লুকিয়ে বাজারে ছাপানো টাকা ছাড়া এবং সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ-এ পরস্পরবিরোধী নীতির কারণে মূল্যস্ফীতির হার কমেনি। উলটো আরও বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেড় বছরের বেশি মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করেছে। অনেকেই মনে করেন, প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি ছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকার এসে জুল্লাইয়ে মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, পয়েন্ট পয়েন্ট ভিত্তিতে (গত বছরের জুল্লাইয়ের তুল্লানায় চলতি জুল্লাইয়ে) মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে। ওই সময়ে ছাপানো টাকা যেমন বাজারে ছাড়া কম হয়েছে, তেমনই পণ্যের দামও কিছুটা কমেছিল, ডল্লারের দামও ছিল স্থিতিশীল। তারপরও মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। এ কারণে অনেকেরই ধারণা, আগে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতির তথ্য লুকিয়ে রেখে অর্থনীতির বাস্তব চিত্রকে আড়াল করেছে বিদায়ি সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিকে আরও সংকোচনমুখী করে। একই সঙ্গে টাকা ছাপানো বন্ধ করে। ফলে আগস্টে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে। এদিকে বিদায়ি সরকারের আমলের শেষ প্রান্তিকের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে আগের প্রান্তিকের চেয়ে টাকার প্রবাহ ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাৎসরিক ভিত্তিতে জুন শেষে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ওই সময়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিদায়ি বছরের লক্ষ্যমাত্রা এবং আগের বছরের তুলনায় টাকার প্রবাহ বাড়ায় প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। কিন্তু লুকিয়ে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার কমেনি।আর ওই সময়ে টাকার প্রবাহ কমেছে বাজারে ডল্লারের প্রবাহ বেশি মাত্রায় হ্রাসের কারণে। ফলে বাজারে ডল্লারের সংকটের কারণে আমদানিতে এর দাম বেড়ে যায়। আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভ‚মিকা রেখেছে।অভ্যন্তরীণ ঋণ বাৎসরিক ভিত্তিতে জুন শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ওই সময়ে এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের জুন শেষে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা এবং গত বছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।

জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ শতাংশ। আগের বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার এবং আগের বছরের তুলনায় এ সময়ে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।সূত্র জানায়, গত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের প্রথম পাঁচ বছর ছাড়া বাকি সময়েই গড়ে বিনিয়োগে স্থবিরতা ছিল। যে কারণে কর্মসংস্থানের গতি বাড়েনি। ২০১৯ সাল থেকে বিনিয়োগে মন্দা আরও প্রকট হয়েছে।বাৎসরিক ভিত্তিতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে গৃহীত সরকারের নিট ঋণ স্থিতি জুন শেষে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গত বছরের জুনে ৩৬ দশমিক ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংল্লাদেশ ব্যাংক থেকে উন্নয়ন খাতে সরকারের ঋণ গ্রহণ বন্ধ থাকায় এবং সরকারের কৃচ্ছ সাধন নীতির অংশ হিসাবে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোয় বাছাইকৃত অর্থায়নের কারণে ব্যাংকব্যবস্থায় সরকারি খাতে নিট ঋণ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।বিদায়ি সরকারের সময়ে কৃত্রিমভাবে খেল্লাপি ঋণ কমিয়ে রাখা হাচ্ছিল। খেল্লাপি হওয়ার যোগ্য এমন ঋণকেও খেল্লাপি না করে নিয়মিত দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পরই এক প্রান্তিকে খেল্লাপি ঋণ ২৯ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২ ল্লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায়। চলতি ও আগামী প্রান্তিকে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। ব্যাংক খাতে বড় ধরনের লুটপাটের কারণেই এখন খেল্লাপি ঋণ বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে। মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। দুর্বল হয়েছে ব্যাংক। যে কারণে অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারছে না।

রপ্তানি আয় ছিল নিম্নমুখী। যেসব পণ্য রপ্তানি হতো, সেগুলোর আয়ও সব দেশে আসত না। একই সঙ্গে আমদানির এলসি খুলে দেনা শোধ করা হলেও পণ্য দেশে আসত না। এর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডল্লারের দাম বেড়েছে বেপরোয়া গতিতে। ২০০৯ সালে ডল্লারের দাম ছিল ৬৯ টাকা। ২০২২ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত তা বেড়ে ৮৫ টাকা হয়। ওই সময়ে বেড়েছে ১৬ টাকা। ২০২২ সালের ফেব্র“য়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বেক মন্দা দেখা দেয়। এর প্রভাবে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। তখন ডল্লারের দামও বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে ডল্লারের প্রবাহ কমে সংকটও প্রকট হয়, যা এখনো চলমান। ২০২২ সালের পর থেকে ৫ আগস্ট সরকারের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত ডল্লারের দাম বেড়ে ১১৮ টাকায় ওঠে। এটি ছিল অফিশিয়াল দর। কিন্তু ব্যাংকগুলো আমদানিতে ডল্লার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা করে। এখন অবশ্য ডল্লারের প্রবাহ বাড়ায় দাম কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দরেই ডল্লার বেচাকেনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুল্লাই থেকে জুন পর্যন্ত এক বছরে ডল্লারের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

Top