তাই ভুল হওয়া স্বাভাবিক,পরীক্ষার ফল প্রণয়ন মানুষই করে থাকে



আলোকিত বার্তা:পরীক্ষার খাতা ‘পুনঃনিরীক্ষা’ নামে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসিসহ পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই খাতা ‘চ্যালেঞ্জ’ করে থাকে।বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের খাতাগুলো ‘পুনর্মূল্যায়ন’ করে বলে ধারণা এসব আবেদনকারীর। কিন্তু বাস্তবে প্রাপ্ত নম্বর গণনা, নম্বর প্রদানের ভুলভ্রান্তিসহ মাত্র চারটি দিক নিরীক্ষা করা হয়। এটাকে কোনোভাবেই পুনঃনিরীক্ষা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক আলোকিত বার্তাকে বলেন, পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়নের ব্যাপারে জনগণের প্রত্যাশা থাকলেও বোর্ডের প্রবিধানমালার কারণে তারা তা করতে পারেন না। এক্ষেত্রে পুনঃনিরীক্ষা করা হয় মাত্র। তিনি জানান, বর্তমান প্রক্রিয়ায় তারা চারটি দিক দেখেন। সেগুলো হচ্ছে- সবক’টি উত্তরে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে (কম্পিউটারে ফল প্রণয়নে পাঠযোগ্য ফরম) উত্তোলনে ভুল হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা।তিনি জানান,পরীক্ষার পর মাত্র দু’মাসের মধ্যে ফল প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এছাড়া কাজটি যেহেতু মানুষই করে থাকে, তাই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। সেটা পুনঃনিরীক্ষার মাধ্যমেই সমাধানযোগ্য। এরপরও যেসব পরীক্ষকের এ ধরনের ভুল হয়, তাদের নানাভাবে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষকদের বড় ধরনের গাফিলতির নজির নেই। যে কারণে পুনঃমূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, ফল প্রকাশের পর যদি পুনঃমূল্যায়ন করতে হয়, তাহলে সেটাকে বলা যায় ‘তৃতীয় পরীক্ষক’র দ্বারা মূল্যায়ন। এটা এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রচলিত আছে। ওই ক্ষেত্রে এটা এ জন্য সম্ভব যে, সেখানে খাতায় কোনো নম্বর প্রদান করা হয় না।টেবুলেশন করতে গিয়ে যদি কোনো খাতায় দু’পরীক্ষকের দেয়া নম্বরে ২০ ভাগ পার্থক্য হয়, তখন সেই খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির খাতায়ই নম্বর প্রদান করা হয়। ফলে কৌশলগত কারণেও তৃতীয় পরীক্ষণ সম্ভব নয়। এটা করতে চাইলে বোর্ডের বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
গত ৬ মে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সম্মিলিতভাবে এবারে পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ ভাগ। পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। ফেল করেছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫০ জন। সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। এরপরও প্রত্যাশিত ফল না হওয়ায় আক্ষেপকারীর সংখ্যা বেশ।এবার সর্বমোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থী তাদের ফল চ্যালেঞ্জ করেছে। এসব পরীক্ষার্থী মোট ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১টি উত্তরপত্রের পুনঃমূল্যায়ন চেয়েছেন। দশ বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৫৮ হাজার ৭০, বরিশালে সাড়ে ৮ হাজার ৪৮০, চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ১৮৩টি, দিনাজপুরে ১২ হাজার ৫৪০, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ১৭৩, সিলেটে ১০ হাজার ৫৪১টি, মাদ্রাসায় ১১ হাজার ৭৪৫ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে খাতা চ্যালেঞ্জের।
সাধারণত উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ বাবদ বোর্ডগুলো ১২৫ টাকা করে ফি নিয়ে থাকে। সেই হিসাবে এবার খাতা পুনঃনিরীক্ষা বাবদ বোর্ডগুলো মোট আয় করেছে ৪ কোটি ৬২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৫ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার দশ বোর্ডে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৯ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে দেশসেরা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে শুরু করে সাধারণ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীও আছে।আবেদনকারীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে জিপিএ-৫ নম্বর না পাওয়ার কারণে আবেদন করেছেন। আবার ৪.৮৮ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা জিপিএ-৫ পেতে চায়। ফেলকরা অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে বলে জানা গেছে। ফল প্রকাশের পরদিনই শুরু হয় খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন প্রক্রিয়া। চলে ১৩ মে পর্যন্ত। আবেদনকারীরা ফল জানতে পারবে ২ জুনের মধ্যে। নয়া ফল নিয়ে তারা ৩ ও ৪ জুন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
এবার শুধু ব্যক্তিপর্যায়েই নয়, ফল নিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনও জমা পড়েছে এবার। যে ক’টি প্রতিষ্ঠান এবার আবেদন করেছে তার মধ্যে একটি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম ৮ মে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে একটি আবেদন করেন।তাতে অবশ্য ফল পুনঃনিরীক্ষার পরিবর্তে ১৬ শিক্ষার্থীর রোল উল্লেখ করে পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওইসব পরীক্ষার্থী প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পড়ালেখা সমাপন করে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে সন্তোষজনক (৮০ বা তদূর্ধ্ব) নম্বর অর্জন করলেও ইংরেজি প্রথম পত্রে খুবই কম নম্বর (৫৫-৬৪) দেয়া হয়েছে।