চ্যালেঞ্জ চলতি অর্থবছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চ্যালেঞ্জ চলতি অর্থবছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের


আলোকিত বার্তা:আগামী জুনে শেষ হচ্ছে চলতি অর্থবছর (২০১৮-২০১৯)। বাকি আছে দুই মাস। এ সময়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) শতভাগ বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। তড়িঘড়ি করে প্রকল্প শেষ করতে গিয়ে কাজের গুণগতমান নিশ্চিত হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি হয়। দেখা গেছে, শেষ দুই মাসে বাস্তবায়নের হার লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে যায়। এবারও ব্যত্যয় ঘটবে না।বুধবার প্রকাশিত বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২৩ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বাস্তবায়ন হার ৫০ শতাংশের নিচে। একই সময়ে গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ।সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই মাসে এত টাকা খরচ করতে হবে বিষয়টি সেরকম নয়। কেননা দেখা যাবে ইতিমধ্যে প্রকল্পের অনেক কাজই এগিয়ে গেছে। কিন্তু বিল পরিশোধ বাকি আছে। তাই টাকা খরচ না হলে তো হিসাবের মধ্যে আসে না। তাছাড়া সার্বিকভাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আরএডিপির বাস্তবায়ন হার বেশি হয়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন আলোকিত বার্তাকে বলেন, যদিও বলা হয় বিল পরিশোধ শেষের দিকে করায় এমনটি হচ্ছে। কিন্তু এটি পুরনো সমস্যা। বাজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থছাড় করা হয়। ফলে খরচ করতেই হবে। এমন চাপ থেকে খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা যায়, শুধু টাকাটা আদায় করার জন্যই। এক্ষেত্রে মানসম্মত প্রকল্প যেমন বাস্তবায়ন হয় না,তেমনি অপচয়ও হয়।সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত মার্চ মাসে এসে সংশোধিত এডিপিতে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি কাটছাঁট করে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় বরাদ্দ নামিয়ে আনা হয়েছিল। এখন সেই বরাদ্দও পুরোপুরি বাস্তবায়ন শঙ্কার মুখে পড়েছে।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন বুধবার আলোকিত বার্তাকে বলেন, মাঠপর্যায়ে সংশোধিত এডিপির অনেকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অনেক সময় খরচের তথ্যটি দেখানো যায়নি। যেমন পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই খরচের হিসাবটি এখনও দেখানো যায়নি। এরকম অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে মে মাসেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিল দেয়া হবে জুন মাসে গিয়ে।আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনছুর মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি সেগুলো ইতিমধ্যেই কাজে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আরএডিপির বাস্তবায়নও বেড়েছে। জুনে গিয়ে দেখা যাবে বাস্তবায়ন শতভাগের কাছাকাছি হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গতি বাড়াতে প্রতিনিয়ত তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কম হওয়ায় প্রায় ৩০ জন সচিবকে ৩০টির মতো ডিও লেটার পাঠিয়েছি।

৫০ শতাংশের নিচে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ:আইএমইডি বলছে, এখনও ৫০ শতাংশের নিতে এডিপি বাস্তবায়ন হার রয়েছে ২৩টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের এডিপি বাস্তবায়নের হার শূন্য শতাংশ। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।পিছিয়ে থাকা বাকিগুলো হচ্ছে- জাতীয় সংসদ সচিবালয়,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,পরিকল্পনা বিভাগ (উন্নয়ন বরাদ্দ), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়।৬০ শতাংশের বেশি অগ্রগতি :আইএমইডির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রথম ১০ মাসে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৬০ শতাংশের বেশি আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। এগুলো হচ্ছে- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আইএমইডি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (থোকসহ), কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Top