খালেদা জিয়াকে মুক্তিতে বাধা এখন চার মামলা।
আলোকিত বার্তা:সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তিতে বাধা এখন চার মামলা। এগুলো হচ্ছে- জিয়া অরফানেজ, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও ঢাকায় মানহানির দুই মামলা। এসব মামলায় জামিন পেলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবীরা।
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে আছে ৫টি। সেগুলো হল- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা।
এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। যার মধ্যে ২৬টি ঢাকায়, কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা হয়।মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা,ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে দায়ের করা হয় এসব মামলা। পুলিশ, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলার বাদী হয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা জানান,খালেদা জিয়ার কারাবাসের ১৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজা নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন।জিয়া অরফানেজ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া দশ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান আলোকিত বার্তাকে বলেন,খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এখন মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ, জিয়া চ্যারিটেবল ও ঢাকার মানহানির দুই মামলায় জামিন নিতে হবে। মানহানির দুটির মধ্যে ধর্মীয় উসকানি ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য গুলশান থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মানহানির দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়না জারি করলেও সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তামিল করছে না। ফলে এই দুই মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না।আরেক আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আলোকিত বার্তাকে বলেন,খালেদা জিয়ার আপিলও জামিন শুনানির বিষয়ে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।
এদিকে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিচার ব্যবস্থায় সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। তবে এমন মন্তব্য মানতে নারাজ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকারের আদালতের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ নেই, বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ কারণেই দুর্নীতিবাজদের বিচার হচ্ছে।তিনি বলেন,খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করায় নিম্ন আদালত তাকে সাজা দেন, পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত তাকে ৫ থেকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ আমি খুঁজে পাই না। শেখ হাসিনার সরকার গঠনের পর থেকেই দেশে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, যা বিএনপির আমলে ছিল না।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন অর্থাৎ গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দ্বিতীয় দফা নেয়া হয়।