একমাত্র পথ গবেষণা সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য গবেষণা অপরিহার্য। আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই গবেষণার ওপর। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিকে টেকসই করতে হবে। আর একমাত্র গবেষণাই পারে তা করতে।তিনি বলেন,এমন ভাবে গবেষণা চালাতে হবে যেন এক সময় আমরা দেশ থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারি। এ জন্য মহাকাশ নিয়েও গবেষণা প্রয়োজন। তখন আমরাও মহাকাশে উড়তে পারব,যেতে পারব।তিনি আরো বলেন,আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী। বিশ্বের উন্নত দেশের ছেলেমেয়েদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমি প্রথমবার সরকারে এসে লক্ষ্য করলাম,গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, এতে কোনো বরাদ্দ দেয়া হতো না। গবেষণার জন্য বিশেষভাবে প্রণোদনা দেয়া দরকার, এটা তাদের মাথায় ঢোকেনি।
তিনি বলেন,আমি সরকারে এসেই তা করলাম।সে সময় আমাদের রিজার্ভ মানি ও সম্পদ কম থাকার পরও ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলাম গবেষণা খাতে। পরে এটি আরো বাড়ানো হয়েছে।তিনি আরো বলেন,এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে স্মার্টফোন। মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। মহাকাশ জয় করেছি। এছাড়া আমাদের মহাকাশ গবেষণা প্রয়োজন। হয়তো আমরা মহাকাশে যেতে পারব। সবকিছু থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে গবেষণা। এ লক্ষ্যে আমরা এ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ চালু করেছি।শেখ হাসিনা বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গবেষণা ও বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ ছিল। এ ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিতে তিনি কাজ করেছেন। আমরাও বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা প্রযুক্তির উন্নয়নে ইতোমধ্যে জাতীয় আইসটি নীতিমালা করতে যাচ্ছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ইন্টারনেট সংযোগ আমরা দিয়েছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।তিনি বলেন আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে। এটা নিয়ে গবেষণা করে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারি। তাই সমুদ্র বিষয়ে গবেষণা দরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে সমুদ্র গবেষণা বিষয়ে সাবজেক্ট খোলা হয়েছে। মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা দরকার। আমরা ভবিষ্যতে যাতে এ ক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নিতে পারি।
তিনি আরো বলেনকোনো ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকবো না। সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যাবে।শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর স্কলারশিপে অনেক শিক্ষার্থীকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর, এই স্কলারশিপ বন্ধ করে দেয়া হলো। অনেক ছাত্রকে বিদেশ থেকে ফিরে আসতে হলো।তিনি বলেন,আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বন অর্জন করেছি। আমরা কোথায় কোথায় আরো উৎকর্ষ অর্জন করতে পারবো এবং কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করতে পারি, তা গবেষণা করে বের করতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশে দরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। ২০৪১ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আমরা সব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে আমরা আটকে থাকিনি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও করছি। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছি। প্রাকৃতিক পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য এই পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন,শত বছর পরও মানুষের জীবনমান কেমন হবে তা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে এটাকে এগিয়ে নিতে পারে। কোনো অশুভ শক্তিই যেন বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে না পারে।তিনি বলেন,আজ ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর আজকের এ দিনে সরকার গঠিত হয়। পরে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামে এ মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।শেখ হাসিনা বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছিলেন। সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংবিধানের এ দুটি ধারা সংশোধন করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক। পৃথিবীতে এ ঘটনা নজিরবিহীন। যারা স্বাধীনতাবিরোধী তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের লালন করে। তারা কখনো দেশের উন্নতি চায় না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি, কবি ও ছড়াকার ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।